শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল নিশ্চিতের আহ্বান

ড্রামে খোলা তেল বিক্রি ও ভিটামিন ‘ডি’ সংযোজন ঘাটতি বড় বাধা: কর্মশালায় বক্তারা

ভিটামিনসমৃদ্ধ ও নিরাপদ ভোজ্যতেলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা দেশের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, ড্রামে খোলা তেল বিক্রি, অস্বচ্ছ প্যাকেজিং এবং ভিটামিন ‘ডি’ সংযোজনের অভাব এখনও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে বড় চ্যালেঞ্জ।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বিএমএ ভবনে “সবার জন্য ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়” শীর্ষক এক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব মন্তব্য করেন বক্তারা। কর্মশালাটি আয়োজন করে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ। এতে প্রিন্ট, টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমের ২৩ জন সাংবাদিক অংশ নেন।

খোলা তেল বিক্রি আইন লঙ্ঘন ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ

কর্মশালায় জানানো হয়, ড্রামে খোলা তেল বিক্রি সরকারি নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ২০১১-১২ সালের জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ অনুযায়ী, দেশের প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন ভিটামিন ‘ডি’-এর ঘাটতিতে ভুগছে।

আইন অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ বাধ্যতামূলক হলেও বাস্তবে অধিকাংশ তেলেই ভিটামিনের পরিমাণ অপ্রতুল। আইসিডিডিআর,বি-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে বিক্রি হওয়া ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশ ড্রামে বিক্রি হয়, যার মধ্যে ৫৯ শতাংশে ভিটামিন ‘এ’ একেবারেই নেই এবং মাত্র ৭ শতাংশে মানসম্মত মাত্রায় রয়েছে।

বক্তারা আরও জানান, এসব ড্রাম প্রায়ই আগে কেমিক্যাল, মবিল বা শিল্পপণ্য সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয়— যা নন-ফুড গ্রেড এবং বিপজ্জনক। ফলে উৎস ও মানের কোনো স্বচ্ছতা না থাকায় নিম্নমানের ও ভেজাল তেল সহজেই বাজারে প্রবেশ করছে।

সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটতি

শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২২ সালের জুলাই থেকে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর থেকে পাম তেল বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়ার কথা থাকলেও, বাজারে এখনো খোলা তেল বিক্রি অব্যাহত রয়েছে।

বক্তারা বলেন, নিরাপদ ও ভিটামিনসমৃদ্ধ তেল নিশ্চিতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সমন্বিত তদারকি আরও জোরদার করা জরুরি।

ভিটামিন ঘাটতির স্বাস্থ্যঝুঁকি

বক্তারা সতর্ক করে বলেন, ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে শিশুদের অন্ধত্ব ও মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে, আর ভিটামিন ‘ডি’-এর ঘাটতিতে রিকেটস, হাড়ক্ষয় ও হৃদরোগসহ নানা অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি তৈরি হয়।

তাঁরা বলেন, ভিটামিন ‘এ’-এর পাশাপাশি ভিটামিন ‘ডি’ সংযোজন জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি কার্যকর, সাশ্রয়ী ও বাস্তবসম্মত সমাধান হতে পারে।

আলো প্রতিরোধী প্যাকেজিংয়ের গুরুত্ব

কর্মশালায় আলোচিত হয় যে, আলো বা সূর্যালোকের সংস্পর্শে ভিটামিন ‘এ’ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই আলো প্রতিরোধী ও অস্বচ্ছ বোতলে তেল সংরক্ষণ অপরিহার্য। এতে তেলের গুণগত মান দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং ভিটামিন কার্যকর থাকে।

উপস্থিত বক্তা ও আলোচকরা

কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—

  • ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, সাবেক উপসচিব ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক;
  • মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার, কনসালটেন্ট, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ;
  • ড. আশেক মাহফুজ, লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন প্রোগ্রাম ও ভ্যালু চেইন পোর্টফোলিও লিড, গেইন (GAIN);
  • দৌলত আক্তার মালা, সভাপতি, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও সিনিয়র রিপোর্টার, দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস;
  • এবিএম জুবায়ের, নির্বাহী পরিচালক, প্রজ্ঞা।

বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা দেন ডা. আলিভা হক, প্রোগ্রাম অফিসার, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন; এবং হাসান শাহরিয়ার, কর্মসূচি প্রধান, প্রজ্ঞা।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন