বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

ইরানে হামলার বিরুদ্ধে চীন–রাশিয়ার তীব্র নিন্দা, নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র–ইসরায়েল হামলার বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির আহ্বান

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে চীন ও রাশিয়া। ফোর্ডো, নাতাঞ্জ এবং ইস্পাহান—এই তিনটি স্থাপনায় চালানো হামলার পর বৈঠক আহ্বান করা হয়। ওই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা।

চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি ফু কং বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় যদি আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের মৌল নীতিগুলো উপেক্ষিত হয়।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলাকে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ব্যবস্থার জন্য অপমানজনক উল্লেখ করে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। চীন শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে জোর দিয়ে বলে, এই ধরনের আগ্রাসী পদক্ষেপ কেবল উত্তেজনা বাড়াবে।

রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এক ধরনের প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছে, যার পরিণতি শুধু ইরান নয়, পুরো অঞ্চলের জন্য ভয়াবহ হতে পারে।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ এবং ‘আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য হুমকি’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এই হামলা শুধু পারমাণবিক স্থাপনাই নয়, গোটা কূটনৈতিক কাঠামোকে আঘাত করেছে।

চীন, রাশিয়া ও পাকিস্তান মিলে নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে যাতে ‘অবিলম্বে ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি’, ‘নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ’ এবং ‘আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার’ আহ্বান জানানো হয়। তবে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্যভাবে এই প্রস্তাবে ভেটো দিতে পারে। ফলে যুদ্ধবিরতির কূটনৈতিক সম্ভাবনা এখন অনিশ্চয়তার মুখে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, “এই হামলা একটি বিপজ্জনক মোড় তৈরি করেছে।” তিনি সব পক্ষকে কূটনৈতিক পথ বেছে নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যুদ্ধ আর একটি মুহূর্তও চলতে দেয়া যায় না। তাঁর মতে, এই সংঘাত দ্রুত বন্ধ না হলে তা বিশ্বব্যাপী সংকটের রূপ নিতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক কূটনীতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র–ইসরায়েলের হামলা, চীন–রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া এবং যুদ্ধবিরতির ব্যর্থতা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো—যেমন বাংলাদেশ—এই উত্তেজনামূলক বৈশ্বিক পরিবেশে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখায় বিশেষ গুরুত্ব দেবে বলে আশা করা যায়।