শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে মামার পরিকল্পনায় বোন জামাইয়ের হাতে শ্যালক খুন

সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জেরে মামার পরিকল্পনায় বোন জামাই ও আত্মীয়দের হাতে এক যুবক খুনের চাঞ্চল্যকর ঘটনা উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) টাঙ্গাইল জেলা। ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

ঘটনার পটভূমি

ঘটনাটি ঘটে ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সকালে। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী থানার নাথেরপাড়া এলাকায় জনৈক মামুন মিয়ার জমির পাশে ঝোপের মধ্যে রফিকুল ইসলাম (৩৫) নামের এক ব্যক্তির রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পরদিন নিহতের মা ছাহেরা বেওয়া (৫৮) বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে ধনবাড়ী থানায় হত্যা মামলা (নং–০১, তারিখ–০৩/০২/২০২২, ধারা–১৪৩/৩৪১/৩০২/১১৪) দায়ের করেন।

পিবিআই-এর তদন্তে নতুন মোড়

প্রাথমিকভাবে মামলাটি ধনবাড়ী থানা পুলিশ তদন্ত করলেও পরে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে তদন্তভার পিবিআই টাঙ্গাইল জেলায় হস্তান্তর করা হয়। মামলার তদন্ত করছেন পিবিআই টাঙ্গাইলের এসআই (নিঃ) মো. আলমগীর কবির।

পিবিআই প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারে, এজাহারনামীয় কেউই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত নয়। পরে ১২ অক্টোবর রাতে তদন্তকারী কর্মকর্তা ধনবাড়ী থানার নাথেরপাড়া এলাকা থেকে সন্দেহভাজন আসামি মকবুল হোসেন (৫৫)-কে গ্রেফতার করেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

হত্যার নেপথ্যের ঘটনা

জবানবন্দিতে মকবুল জানান, মামার বাড়ির ওয়ারিশি সম্পত্তি এবং গরু চুরির বিরোধ নিয়ে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে তার মামা, মামাতো ভাই ও বোন জামাইদের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব চলছিল। এছাড়া জমি ও ঘর ভাঙা নিয়েও রফিকুলের সঙ্গে তার বড় বোন জামাই মকবুল ও হাফিজুরের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

এরই জেরে হত্যার কয়েকদিন আগে রফিকুলের মামা রেহানের বাড়িতে বসে মকবুল, হাফিজুর, রেহান, জলিল, সেকান্দার ও আলম মিলে রফিকুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আলম আগেই ধানের বীজক্ষেতে একটি চাপাতি লুকিয়ে রাখে।

ঘটনার দিন আলম মাদক সেবনের প্রলোভন দেখিয়ে রফিকুলকে ডেকে নেয়। সেখানে পৌঁছানো মাত্রই লুকিয়ে থাকা মকবুল, হাফিজুর, রেহান, জলিল ও সেকান্দার রফিকুলের ওপর এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা শুরু করে। এক পর্যায়ে আলম চাপাতি দিয়ে তার মাথা ও মুখে আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই রফিকুল মারা যান।

পরে আসামিরা মরদেহ স্থানীয় মামুন মিয়ার বিরোধপূর্ণ জমিতে ফেলে পালিয়ে যায়।

তদন্ত চলছে

পিবিআই জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া মকবুলের জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্য আসামিদের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন