শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য নয়, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “কিছু রাজনৈতিক দল আজ জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে এক টুকরো কাগজে সই করছে।” শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) রাজধানীর ইস্কাটনে নবগঠিত শ্রমিক সংগঠন ‘জাতীয় শ্রমিক শক্তি’–র আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “বিগত ১৬ বছরের শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে শ্রমিক সমাজ। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের আগেও ন্যায্য মজুরির দাবিতে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছিল, পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিল।”

তিনি বলেন, “আজ কিছু রাজনৈতিক দল নিজেদের মধ্যে আলোচনাকে ‘জাতীয় ঐকমত্য’ বলছে। কিন্তু জাতীয় ঐক্য তখনই হয়, যখন ছাত্র–শ্রমিক–পেশাজীবী মানুষ দেশপ্রেমের ভিত্তিতে একসঙ্গে লড়াই করে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানই ছিল প্রকৃত জাতীয় ঐক্যের উদাহরণ—সেখানে কোনো দলের ব্যানার ছিল না, ছিল কেবল জনগণের পতাকা।”

শ্রমিক অধিকার ও মর্যাদাপূর্ণ উন্নয়নের কথা

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়নের কেন্দ্রে থাকতে হবে মানবিক মর্যাদা, মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান ও শ্রমিকের ন্যায্য হিস্যা। যে প্রবৃদ্ধির গল্প জনগণকে শোনানো হয়েছে, সেটি শ্রমিকের ঘাম চেপে রাখা একটি ভাঁওতাবাজি। আমরা এমন একটি সমাজ চাই, যেখানে শ্রমিকের জীবনমান হবে উন্নয়নের মানদণ্ড।”

তিনি অভিযোগ করেন, “আজ যে দলগুলো জাতীয় ঐকমত্যের নামে সই করছে, তারা জনগণের বাস্তব সমস্যা থেকে দূরে সরে গেছে। অথচ রাজপথের শক্তিই আসল শক্তি। শ্রমিকেরা আজ রাজপথে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে, ইনশা আল্লাহ তারাই জয়ী হবে।”

লুটপাটের রাজনীতি ও সংস্কার প্রশ্নে সমালোচনা

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলো প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, “নির্বাচনকেন্দ্রিক ছয়টি কমিশন নিয়ে ব্যস্ততা চলছে, কিন্তু শ্রম কমিশন বা স্বাস্থ্য কমিশনের কোনো খবর নেই। সাধারণ মানুষের জীবন ও কর্মসংস্থান নিয়ে কোনো আলোচনাই নেই। এটি কোনো গণতান্ত্রিক সংস্কার নয়।”

তিনি বলেন, “যারা ফ্যাসিবাদী আমলে শ্রমিকদের রক্ত শোষণ করেছে—সেই রাঘব, মাফিয়া ও অলিগার্কদের বিচার আজও হয়নি। বরং তাদের ব্যবসা রক্ষা করা হচ্ছে, রাজনৈতিক ছায়া দেওয়া হচ্ছে। আমরা এই অলিগার্কি ব্যবস্থার অবসান চাই।”

শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব ঘোষণা

অনুষ্ঠানে নতুন শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তি-এর নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়। আহ্বায়ক করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাজহারুল ইসলাম ফকিরকে, সদস্যসচিব রিয়াজ মোর্শেদ, এবং মুখ্য সংগঠক আরমান হোসেন।

এসময় এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়েই শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্য চালানো হচ্ছে। জাতীয় শ্রমিক শক্তি শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে রাজপথে থাকবে।”

শ্রম সংস্কারের দাবি

শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিগত কয়েক বছরে হাজারো শ্রমিকের মৃত্যু ঘটেছে, অথচ দায়ীদের বিচার হয়নি। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করাও আজ সময়ের দাবি।”


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন