শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু, সিআইডির তদন্ত শেষ পাঁচ মাসেই

রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মাত্র পাঁচ মাসেরও কম সময়ে তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের পর আসামিদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকার্য শুরু করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ সোমবার (১৪ অক্টোবর) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত–১৮ এর বিচারক এ আদেশ দেন। সিআইডির দাখিল করা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য পলাতক আসামিদের অনুপস্থিতিতেই বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন।

সিআইডির দ্রুততম তদন্ত সম্পন্ন

সিআইডি জানায়, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিনটি মূল এজেন্ডা—সংস্কার, নির্বাচন ও বিচার—এর অংশ হিসেবে সংস্থাটি সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে।

গত ১৪ আগস্ট ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে পেনাল কোডের ১২১, ১২১(ক) ও ১২৪(ক) ধারায় শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা (সি.আর. রমনা নং–২২২/২০২৫) দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর একই ধারায় ২৭ মার্চ ২০২৫ তারিখে সিআইডি কর্তৃক রুজু করা হয়। মামলায় প্রাথমিকভাবে ৭৩ জনকে নামীয় আসামি এবং অজ্ঞাতনামা আরও অনেকে অভিযুক্ত করা হয়।

ডিজিটাল প্রমাণ ও গোয়েন্দা তথ্য

তদন্তে সিআইডি বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, সার্ভার ও যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সংগ্রহ করে। ফরেনসিক বিশ্লেষণ এবং সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রমও দ্রুত সম্পন্ন করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর “জয় বাংলা ব্রিগেড” নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে জুম (Zoom) অ্যাপের মাধ্যমে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দেশ ও বিদেশ থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা যুক্ত ছিলেন।

সিআইডির বিশ্লেষণে দেখা যায়, সভায় বর্তমান বৈধ সরকারকে উৎখাতের আহ্বান, গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হয়।

তদন্তে অভিযুক্তদের চিহ্নিতকরণ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে সিআইডি রাষ্ট্রদ্রোহ অভিযোগে তদন্ত শুরু করে। ফরেনসিক পরীক্ষায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. রাব্বি আলমসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে।

তদন্তে ইতোমধ্যে ৯১ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, যারা দেশের বিভিন্ন কারাগারে অন্যান্য মামলায় আটক ছিলেন। বাকি ১৯৫ জন আসামি পলাতক। আদালত আজ তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকার্য চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন।

বিচার এজেন্ডায় অগ্রগতি

সিআইডি জানায়, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করা এবং আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে সংস্থাটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা—‘বিচার’—বাস্তবায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন