রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান নির্ধারণে বিকল্প প্রস্তাব দিল বিএনপি

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে নিযুক্তি নিয়ে একাধিক বিকল্প প্রস্তাবনা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল রবিবার (১৩ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব প্রস্তাবের কথা সাংবাদিকদের জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

সালাহউদ্দিন বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় আগে যে Judicial Dependency ছিল, সেটা বাদ দিয়ে বিকল্প কিছু প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। যাতে বিচার বিভাগকে বিতর্কের বাইরে রাখা যায়। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা তৈরির চেষ্টা চলছে।”

তিনি বলেন, “আমাদের প্রস্তাব, রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করা উচিত নয়। তবে যদি অন্য কোনো সমঝোতা না হয়, একেবারে শেষ বিকল্প হিসেবে রাষ্ট্রপতি অথবা কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান প্রধানকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।”

সালাহউদ্দিন আহমদ উল্লেখ করেন, “সংসদ বিলুপ্তির আগে রাষ্ট্রপতি, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে, প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়ন করবেন। যদি তাতে ঐকমত্য না হয়, তখন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকারের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হবে। ডেপুটি স্পিকার অবশ্যই বিরোধী দল থেকে হতে হবে। রাষ্ট্রপতি বা স্পিকার এই কমিটি প্রিজাইড করবেন। রাষ্ট্রপতি প্রিজাইড করলে তাঁর কোনো ভোটাধিকার থাকবে না। স্পিকার করলে তাঁর ভোটাধিকার থাকবে।”

তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে যদি ঐকমত্য না আসে, তবে সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধিও ঐ কমিটিতে যুক্ত হতে পারে। আবার প্রয়োজনে বিরোধীদলীয় নেতা বাদে, অন্য বিরোধী দলগুলোর মধ্য থেকে যারা ন্যূনতম পাঁচ শতাংশ ভোট পেয়েছে, তাদের প্রতিনিধি নেওয়ার প্রস্তাবও করেছি। এগুলো না হলে, শেষ পর্যন্ত ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী আগের তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতিতে ফিরে যেতে হবে।”

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, “অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের মধ্য থেকে, যাদের বয়স ৭৫ বছরের বেশি নয়, তাদের মধ্যে থেকে একজনকে বাছাই করা যেতে পারে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকারের সমন্বয়ে কমিটি যাচাই-বাছাই করবে।”

তিনি বলেন, “তবে সবশেষে রাষ্ট্রপতিকে রাখার বা না রাখার সিদ্ধান্তও নেওয়া যেতে পারে। কিংবা কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান প্রধানকেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আপার হাউস, লোয়ার হাউস বা র‍্যাঙ্কিং চয়েস পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা চলছে।”

জরুরি অবস্থা নিয়ে ঐকমত্য

গতকালের বৈঠকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা হয়। সালাহউদ্দিন বলেন, “সংবিধানের ১৪১(ক) অনুচ্ছেদে ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগ’ শব্দটি পরিবর্তন করে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতার প্রতি হুমকি, মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে।”

তিনি জানান, “জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে গেলে এখন শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের প্রয়োজন। তবে কমিশনের প্রস্তাব, মন্ত্রিসভার অনুমোদন থাকতে হবে। সেই প্রস্তাবও সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা বা তাঁর অনুপস্থিতিতে বিরোধীদলীয় উপনেতা অংশগ্রহণ করবেন, সেটিও সংযোজিত হয়েছে।”

সালাহউদ্দিন বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা, আমরা চাই, বিতর্কের বাইরে থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিকে পুনঃস্থাপন করতে। এ নিয়ে আমাদের আলোচনা আরও চলবে।”


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন