শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

বৈষম্যমূলক ড্যাপ বাতিল ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ পুনর্বহালের দাবিতে রাজউক ঘেরাও কর্মসূচি পালন

রাজধানী ঢাকায় বিতর্কিত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ২০২২-২০৩৫ বাতিল এবং ২০০৮ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা পুনর্বহালের দাবিতে আজ মঙ্গলবার (২০ মে ২০২৫) রাজধানীর রাজউক কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (DCLOA)।

সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে জমির মালিক, আবাসন ব্যবসায়ী, ভুক্তভোগী বাসিন্দা ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা রাজউকের সামনে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় তারা “বৈষম্যমূলক ড্যাপ বাতিল করো”, “ভবন নির্মাণে স্বাধীনতা দাও”, “২০০৮ সালের বিধিমালা পুনর্বহাল করো”— এসব স্লোগানে রাজউক ঘেরাও করেন।

পটভূমি ও অভিযোগ

বক্তারা অভিযোগ করেন, সদ্য পতিত সরকারের আমলে একটি মহলের চাপে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের অধীনে তড়িঘড়ি করে যে ড্যাপ-২০২২-২০৩৫ প্রণয়ন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ বেআইনি, বৈষম্যমূলক এবং জনবিরোধী। এতে ঢাকার সাধারণ মানুষের ভবন নির্মাণের অধিকার হরণ করা হয়েছে।

নেতারা বলেন, এই ড্যাপের কারণে ঢাকার ৮০ শতাংশ এলাকাকে প্রায় অচল করে রাখা হয়েছে। একদিকে ধানমন্ডি, গুলশান, বারিধারা, বনানী, উত্তরা এলাকায় ভবনের উচ্চতা ও আয়তনে কোনো সংকোচন না থাকলেও, অন্যদিকে শেওড়াপাড়া, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, শনিরআখড়া, বাড্ডাসহ অন্যান্য এলাকাগুলোতে ভবন নির্মাণের উচ্চতা এবং আয়তন প্রায় ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে রাজধানীতে সৃষ্টি হয়েছে চরম বৈষম্য ও সামাজিক অসন্তোষ।

পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা

বক্তারা আরও বলেন, জমিতে ফার কমিয়ে দেওয়ায় জমির মালিকরা ভবন নির্মাণে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। ফলে অনেক এলাকায় ফাঁকা জায়গা, সেমিপাকা ভবন ও জরাজীর্ণ দালানগুলো পড়ে থাকছে, যেগুলো মাদকসেবীদের আড্ডাখানা ও নানা অবৈধ কার্যকলাপের কেন্দ্র হয়ে উঠছে। এতে একদিকে যেমন শহরের পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে, অন্যদিকে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার—আবাসনের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে।

অর্থনৈতিক ক্ষতিও উল্লেখযোগ্য

ড্যাপের কারণে নির্মাণ খাতে ইতোমধ্যেই ব্যাপক ধস দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন সংগঠনের নেতারা। এতে দেশের আবাসন ও নির্মাণ খাত সংশ্লিষ্ট বহু শিল্প-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, বেকারত্ব বাড়ছে, সরকারের রাজস্ব আয় মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে এবং লিংকেজ সেক্টরগুলো স্থবির হয়ে পড়ছে।

সংগঠনের দাবি

বক্তারা বলেন, তারা বহুবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও দপ্তরে আবেদন নিবেদন করেছেন; গণশুনানি ও সভাতেও অংশ নিয়েছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

তাদের প্রধান দাবি হলো—

১. বৈষম্যমূলক ড্যাপ ২০২২-২০৩৫ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে

২. ২০০৮ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা পুনর্বহাল করে তা অনুযায়ী ভবন নির্মাণের অনুমতি দিতে হবে

৩. ঢাকার মহল্লাগুলোর রাস্তা প্রশস্ত করে নাগরিকবান্ধব পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে

৪. আবাসন খাতকে বাঁচাতে এবং রাজস্ব প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে জনস্বার্থে নতুন পরিকল্পনা নিতে হবে

উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি

রাজউক ঘেরাও কর্মসূচিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত সহস্রাধিক জমির মালিক অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন DCLOA-এর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, আবাসন ব্যবসায়ী, প্রকৌশলী, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং অনেক ভুক্তভোগী নাগরিক।

তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দ্রুত এই বৈষম্যমূলক নীতি বাতিল করে তাদের দাবি মেনে না নেওয়া হলে আরও বড় আন্দোলনের দিকে যেতে বাধ্য হবেন।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন