শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

৫–২৯ বছর বয়সী শিশু–তরুণদের সুরক্ষায় কাজ করছে সরকার: বিআরটিএ চেয়ারম্যান

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা ৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী শিশু ও তরুণদের সুরক্ষায় সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ। রাজধানীর বনানীতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিআরটিএ এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের যৌথ ব্যবস্থাপনায় ‘ওয়ার্ল্ড ডে অব রিমেমব্রেন্স ফর রোড ট্রাফিক ভিকটিমস’-২০২৫ উপলক্ষে রবিবার সকাল ১১টায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন,

“যুবসমাজকে সুরক্ষায় ব্যর্থ হলে ২০৪০ সালের পর বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট হারাবে। তাই সড়ক নিরাপত্তায় সমন্বিত উদ্যোগ অপরিহার্য।”

তিনি জানান, সেফ সিস্টেম এপ্রোচ বাস্তবায়নে যানবাহনের ফিটনেস সিস্টেমকে অটোমেশনে নেওয়া হচ্ছে এবং দক্ষ চালক তৈরিতে বাধ্যতামূলক ৬০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ চালু করা হয়েছে। এই প্রশিক্ষণ ছাড়া ভবিষ্যতে কোনো চালক লাইসেন্স পাবেন না।

রোডক্র্যাশ প্রতিরোধযোগ্য—ডিভিশনাল কমিশনার

বিশেষ অতিথি ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দীন আহাম্মদ চৌধুরী বলেন,

“রোডক্র্যাশ প্রতিরোধযোগ্য, কিন্তু এক্সিডেন্ট প্রতিরোধযোগ্য নয়। তাই সড়ক পরিবহন আইন নয়, আলাদা ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ এখন অত্যন্ত জরুরি।”

তিনি বলেন, রোডক্র্যাশ রোধে কঠোর আইন, সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছাড়া নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

৫–২৯ বছরের মৃত্যুর প্রধান কারণ রোডক্র্যাশ

সভায় উপস্থাপিত মূলপ্রবন্ধে জানানো হয়—

  • রোডক্র্যাশই বিশ্বের ৫–২৯ বছরের মানুষের প্রধান মৃত্যুর কারণ
  • ৯২% মৃত্যু ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে
  • উন্নত দেশের তুলনায় এই হার তিন গুণ বেশি
  • বাংলাদেশে রোডক্র্যাশ ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), পুলিশ ও বিআরটিএর তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, বিশ্বের অনেক দেশ সেফ সিস্টেম এপ্রোচ গ্রহণ করে সড়ক মৃত্যুহার কমাতে সক্ষম হয়েছে।

সড়ক নিরাপত্তায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার

এ বছর মরক্কোতে অনুষ্ঠিত ৪র্থ গ্লোবাল মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে—

  • ২০২৭ সালের মধ্যে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা আইন চূড়ান্ত ও অনুমোদন
  • ২০২৬ সালের মধ্যে মোটরসাইকেল হেলমেট স্ট্যান্ডার্ড বাস্তবায়ন গাইডলাইন
  • গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় পর্যায়ের ম্যানুয়াল প্রণয়ন
  • সেন্ট্রাল রোডক্র্যাশ ডাটা সিস্টেম স্থাপন

সভায় বলা হয়, এসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেশের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নতুন মাত্রা দেবে।

বিস্তৃত অংশগ্রহণ

মতবিনিময় সভায় রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশের সদস্য প্রতিষ্ঠান ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, ব্র্যাক, সিআইপিআরবি, স্টেপস, গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটর, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সরকারি সংস্থার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন—

সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়, ডিটিসিএ, পুলিশ সদর দপ্তর, বিআরটিসি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, দুই সিটি করপোরেশন, সমাজসেবা অধিদপ্তর, নিটোর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং পরিবহন মালিক–শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন