শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

টেলিগ্রামে বিদেশি বিনিয়োগের নামে পাঁচ কোটি টাকার প্রতারণা, মূলহোতাসহ দুই সদস্য গ্রেফতার করেছে সিআইডি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া গ্রুপ খুলে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া একটি সংঘবদ্ধ প্রতারণা চক্রের মূলহোতাসহ দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডির ঢাকা মেট্রো পূর্ব বিভাগের একটি আভিযানিক দল এলআইসি ইউনিটের প্রযুক্তিগত সহায়তায় গত ৬ নভেম্বর ভোরে পঞ্চগড় জেলার সদর থানার ধাক্কামারা এলাকা থেকে মূলহোতা ফারদিন আহমেদ ওরফে প্রতীক (২৫)–কে গ্রেফতার করে।

পরবর্তীতে ফারদিনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই টিম ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল থেকে সহযোগী মো. সাগর আহমেদ (২৪)–কে গ্রেফতার করে।

প্রতারণার কৌশল

প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, চক্রটি টেলিগ্রাম অ্যাপে “বিদেশি বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম” নামে একাধিক ভুয়া গ্রুপ তৈরি করে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখাতো।

গ্রুপে কিছু ‘নকল সদস্য’ ইতিবাচক পোস্ট দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করত—যেন তারা ইতোমধ্যে লাভবান হয়েছে।

এইভাবে সাধারণ মানুষ প্রলুব্ধ হয়ে বিনিয়োগে আগ্রহী হতো এবং চক্রের ফাঁদে পড়তো।

প্রতারকরা তৃতীয় পক্ষের নামে খোলা ব্যাংক ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) একাউন্ট ব্যবহার করে টাকার লেনদেন করত, ফলে অনেক সময় একাউন্টধারীরাই অজান্তে অভিযুক্ত হয়ে পড়তেন।

ভুক্তভোগীদের অনেকে ইতোমধ্যেই সর্বস্ব হারিয়েছেন।

আইনি পদক্ষেপ

এ বিষয়ে পল্টন থানায় দুটি পৃথক মামলা রুজু হয়েছে—

  • মামলা নং ১০ (তারিখঃ ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
  • মামলা নং ১২ (তারিখঃ ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
    উভয় মামলাই পেনাল কোডের ৪২০/৪১৭/৪১৯/৪০৬/১০৯/৩৪ ধারায় দায়ের করা হয়।
    তদন্তভার সিআইডির উপর ন্যস্ত হলে সংস্থাটি দ্রুত চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করে।

প্রধান অভিযুক্তের ভূমিকা

মূলহোতা ফারদিন আহমেদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সে টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে সক্রিয় থেকে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিত।

তার নিয়ন্ত্রণে ছিল ৩০টিরও বেশি ব্যাংক ও এমএফএস একাউন্ট এবং অসংখ্য সিমকার্ড, যেগুলো ব্যবহৃত হতো প্রতারণার কাজে।

অন্যদিকে, সহযোগী সাগর আহমেদ “Rio” নামে ফেইক আইডি ব্যবহার করে “Alexa Wick” নামীয় গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে কাজ করতো, যার সদস্য সংখ্যা ছিল ৭ জন। তারা অনলাইন বিনিয়োগের নামে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেছে।

অর্থ ক্যাশ আউটের অভিনব কৌশল

তদন্তে আরও জানা যায়, প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ নগদে রূপান্তরের জন্য ফারদিন অভিনব উপায়ে গাড়ির শোরুম থেকে ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে গাড়ি কিনে পরে কম দামে বিক্রি করে কাগজে লোকসান দেখিয়ে টাকা ‘ক্যাশ আউট’ করত।

এভাবেই প্রতারণার টাকা হোয়াইটমানি হিসেবে দেখানো হতো।

পরবর্তী ব্যবস্থা

ফারদিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, তার নিয়ন্ত্রণাধীন একাউন্টগুলোর মাধ্যমে প্রায় পাঁচ কোটি টাকারও বেশি অর্থ লেনদেন হয়েছে।

চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম, একাউন্ট তথ্য ও অর্থের গন্তব্য উদঘাটনের জন্য দুই আসামিকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

বর্তমানে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম সিআইডির ঢাকা মেট্রো পূর্ব বিভাগ পরিচালনা করছে। চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন