শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী গড়তে ড্যাপ সংশোধনীর প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন

রাজধানী ঢাকাকে আরও পরিকল্পিত, পরিবেশবান্ধব ও বাসযোগ্য নগরীতে রূপ দিতে ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) ২০২২–২০৩৫–এর সংশোধনীর প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। শিগগিরই সংশোধিত ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।

রোববার গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় রাজউক প্রণীত ড্যাপ বাস্তবায়ন মনিটরিং ও সংশোধন সুপারিশ প্রণয়ন উপদেষ্টা কমিটির সভা। সভা শেষে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বন্যাপ্রবাহ এলাকা রক্ষা ও ফার বৃদ্ধি

সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী, রাজউক এলাকার বেশিরভাগ স্থানে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) এবং জনঘনত্ব বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে কৃষিজমিতে পূর্বনির্ধারিত নাগরিক সেবা নির্মাণের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।

ড্যাপের পূর্ব সংস্করণে পৃথকভাবে উল্লেখিত মুখ্য ও সাধারণ জলস্রোত–কে নতুন সংশোধনীতে একীভূত করে ‘বন্যাপ্রবাহ অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এ অঞ্চলে কোনো প্রকার স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ থাকবে।

শহর উন্নয়নে নতুন নীতিমালা ও ফার প্রণোদনা

নতুন ড্যাপে টিওডি (ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট), রিজেনারেশন জোন ও ব্লকভিত্তিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে ফার বৃদ্ধির প্রস্তাব রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০–এর সঙ্গে সমন্বয় রেখে ইমারত নির্মাণ বিধিমালাও সংশোধন করা হচ্ছে।

এই বিধিমালায় ভয়েড স্পেস, সেটব্যাক, ভূমি আচ্ছাদন ও জনঘনত্ব সংক্রান্ত নিয়মগুলো হালনাগাদ করা হয়েছে। এছাড়া, পাঁচ কাঠা বা তদূর্ধ্ব জমির প্রকল্পে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

নতুন দিকনির্দেশনা ও গ্রিন বিল্ডিং প্রণোদনা

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভবন নির্মাণ অনুমোদনের প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হয়েছে। বৃহৎ প্রকল্পে আর আলাদা অনুমোদন প্রয়োজন হবে না, বরং অনুমোদন ফি জমা দেওয়ার পরই কাজ শুরু করা যাবে।

একই সঙ্গে গ্রিন বিল্ডিং প্রণোদনা, দুর্যোগ-সহনশীল নকশা অনুমোদন ও আপিল কমিটি গঠন–এর মতো সংযোজনও করা হয়েছে।

অংশীজনের ঐকমত্য ও রাজউকের বক্তব্য

রাজউকের প্রধান নগর–পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, “পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, প্রকৌশলী ও পরিবেশবাদী সংগঠন—সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতেই ড্যাপ সংশোধনীর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, “নতুন সংশোধনীর ফলে রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় ভবন এক থেকে দোতলার বেশি করা যাবে, শুধু ধানমন্ডি ও গুলশান এলাকা এই সুবিধার বাইরে থাকবে।”

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন

সভায় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ণ উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, পরিবেশ সচিব ফারহিনা আহমেদ, স্থানীয় সরকার সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, সেতু সচিব আবদুর রউফ, গৃহায়ণ সচিব নজরুল ইসলাম, বিদ্যুৎ সচিব ফারজানা মমতাজ, রেল সচিব ফাহিমুল ইসলাম, আইন সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা এবং রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম।

আবাসন খাতের প্রতিক্রিয়া

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন,

“আমরা দীর্ঘদিন ধরে ড্যাপ সংশোধনের অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে তা অনুমোদিত হওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আশা করছি, এবার আবাসন খাতে ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন গতি ফিরবে।”


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন