শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

চীনে চাকরির প্রলোভনে নারী পাচার চক্রের মূলহোতাসহ চারজন গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪

চীনে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশি তরুণীদের পাচার করে জোরপূর্বক দেহব্যবসায় বাধ্য করার অভিযোগে আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের মূলহোতাসহ চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-৪। সংস্থাটি জানায়, গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলার মেয়েদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচার করছিল।

র‍্যাব-৪ এর অভিযান

র‍্যাব-৪ এর একটি বিশেষ দল সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রটির চার সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন—

১. আব্বাস মোল্লা (৩৬), ফরিদপুর

২. জাহিদুল ইসলাম ওরফে বাবু (৩১), আদাবর, ঢাকা

৩. মিনার সরদার (৩০), গোপালগঞ্জ

৪. মোহাম্মদ রিপন শেখ (২৮), গোপালগঞ্জ

র‍্যাব জানায়, তারা দীর্ঘ আট বছর ধরে একই কৌশলে মেয়েদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে চীনে পাচার করছিল।

চাকরির প্রলোভন ও প্রতারণা

তদন্তে জানা যায়, ভিকটিম একজন তরুণী ও তার খালাতো বোন পিরোজপুরে একটি বিউটি পার্লারে কাজ করতেন। কয়েক মাস আগে ফেসবুকে আসামি জাহিদুল ইসলাম বাবুর সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। বাবু জানায়, চীনে পার্লারের কাজ আছে এবং সেখানে মাসে ১ লাখ টাকা বেতনসহ পৌঁছানোর পর ১০ লাখ টাকা বোনাস দেওয়া হবে।

পরবর্তীতে বাবু তাদের ঢাকায় এনে চক্রের মূলহোতা আব্বাস মোল্লার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। আব্বাস পাসপোর্ট ও ভিসা করে দেয়ার পর তাদের চক্রের নারী সদস্য সিলভির মাধ্যমে চীনে পাঠানো হয়।

চীনে দেহব্যবসায় বাধ্য করা

চীনে পৌঁছানোর পর দুই তরুণীকে বিউটি পার্লারে কাজ না দিয়ে আলাদা দুটি বাসায় বন্দি করে দেহব্যবসায় বাধ্য করা হয়। সেখানে তারা নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। নির্যাতনে এক তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়লে বিভিন্ন শর্তে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে তার খালাতো বোন চীনে বন্দি অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশে ফিরে এসে ভিকটিম পাচারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ভুক্তভোগীকে উদ্ধার আশ্বাসের নামে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করে। পরে তিনি থানায় মামলা করেন এবং র‍্যাবের সহযোগিতা চান।

চক্রের স্বীকারোক্তি

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামিরা স্বীকার করেছেন যে, তারা বহু বছর ধরে একইভাবে নারীদের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করে আসছে। তারা কখনও চীনা নাগরিকের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব, আবার কখনও বিদেশি নাগরিকত্ব ও বিলাসবহুল জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তরুণীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলত।

র‍্যাব আরও জানিয়েছে, এই চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে পূর্বেও একাধিক মানব পাচার মামলা রয়েছে।

আইনি ব্যবস্থা ও র‍্যাবের অবস্থান

র‍্যাব–৪ জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন।

সংস্থাটি বলেছে, চক্রের অন্য সদস্যদেরও শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

র‍্যাব এক বিবৃতিতে জানায়, “বাংলাদেশ আমার অহংকার”—এই স্লোগানে র‍্যাব সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং মানব পাচারের মতো সামাজিক অপরাধ দমনে শূন্য সহনশীলতার নীতি অনুসরণ করছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন