ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি, দাবি পেন্টাগনের — ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধ সুর
- প্রান্তকাল ডেস্ক
- ৬ ঘণ্টা আগে
যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়েছে—প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন দাবি করলেও মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের একটি প্রাথমিক মূল্যায়নে উল্টো চিত্র উঠে এসেছে। পেন্টাগনের গোয়েন্দা সংস্থা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (DIA) দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, এই হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে মাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে দিতে পেরেছে, ধ্বংস নয়।
গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহানে অবস্থিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা নিক্ষেপ করে। এতে ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়, যা ৬০ ফুট কংক্রিট বা ২০০ ফুট মাটি ছেদ করে বিস্ফোরিত হতে সক্ষম। এই হামলায় বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান ব্যবহৃত হয়।
পেন্টাগনের তথ্য মতে, ইরানের ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলোর সেন্ট্রিফিউজ এখনো কার্যত অক্ষত রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি মূলত অবকাঠামো ও প্রবেশপথে সীমাবদ্ধ। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের ভাষ্যমতে, “ইরানকে কয়েক মাস পিছিয়ে দেওয়া গেছে, কিন্তু কর্মসূচি গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়নি।”
সূত্র আরও জানায়, ইরান আগে থেকেই ইউরেনিয়ামের একটি অংশ স্থানান্তর করে রেখেছিল এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও খালি করে ফেলা হয়েছিল। ফলে কৌশলগত দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি সফল হয়নি বলেই ধারণা।
হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া: “পুরোপুরি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই গোয়েন্দা মূল্যায়নকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, “এটি প্রেসিডেন্টকে হেয় করার চেষ্টা এবং সামরিক ইতিহাসের অন্যতম সফল অভিযানের মর্যাদা নষ্ট করার প্রচেষ্টা।” তিনি ট্রুথ সোশাল অ্যাকাউন্টে একাধিক পোস্টে CNN ও নিউইয়র্ক টাইমস-কে “ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশনের” জন্য দায়ী করেন।
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, “গোপন তথ্য ফাঁস রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এর তদন্ত হওয়া উচিত।” তিনি দাবি করেন, তিনটি স্থাপনাই সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এবং বাংকার-বোমাগুলো সরাসরি ভূগর্ভস্থ টার্গেটে বিস্ফোরিত হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ফোর্দোর দুইটি প্রবেশপথে বিস্ফোরণের চিহ্ন রয়েছে এবং আশপাশে ধ্বংসস্তূপ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই ছবি দেখে ভূগর্ভস্থ কাঠামোর সুনির্দিষ্ট অবস্থা বোঝা যাচ্ছে না।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার নিরস্ত করতে সক্ষম হয়েছি।” সৌদি সূত্রের বরাতে জানা যায়, ইউরেনিয়ামের বড় একটি অংশ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে বলেই বিশ্বাস করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক পরমাণু অস্ত্র বিশ্লেষক ডেভিড অলব্রাইট বলেছেন, ইরানের কর্মসূচি পুনরুদ্ধারে এখন ‘মাসের পর মাস সময় ও বিপুল ব্যয়’ লাগবে। তবে তার মতে, যদি ইরান এটি পুনরায় চালু করে, তাহলে ফের হামলার ঝুঁকি বাড়বে।
পাল্টা হামলা ও যুদ্ধবিরতি
হামলার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইরান কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটি আল-উদেইদ-এ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। হামলা প্রতিহত হলেও আঞ্চলিক উত্তেজনা তীব্র হয়। এরপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান এবং তেহরান ও তেলআবিব তা মেনে নেয়।
সংঘাতের সূচনা
১৩ জুন ইসরায়েল প্রথম ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। ইরান পাল্টা জবাবে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তীব্র সংঘর্ষে দুই পক্ষই ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে হুমকি হিসেবে দেখে আসছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সবসময় বলেছেন, তিনি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রে পরিণত হতে দেবেন না।
তবে সমালোচকেরা বলছেন, “সফল হামলার” প্রচার যেমন চলছে, তেমনই হামলার বাস্তব ফল নিয়ে ভেতরে চলছে বিতর্ক ও অনিশ্চয়তা।