বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

দক্ষিণ পাইক পাড়ায় ঈদের দিনে পরিচ্ছন্নতার দৃষ্টান্ত গড়ছে অগ্রদূত ক্লাব

ঢাকার মিরপুর থানাধীন দক্ষিণ পাইক পাড়ায় ঈদুল আজহার দিন কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন অগ্রদূত ক্লাব। ঈদের দিন সকাল থেকেই ক্লাবের স্বেচ্ছাসেবকরা রাস্তাঘাট ও আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। বর্জ্য অপসারণ শেষে জীবাণুনাশক ও ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে পুরো এলাকা স্বাস্থ্যসম্মত করে তোলেন তারা।

এই কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ও ক্লাবের নিজস্ব কর্মীবাহিনী দ্বারা পরিচালিত হয়, যা নগর জীবনের জন্য এক ব্যতিক্রমধর্মী নাগরিক উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পরিচ্ছন্নতার ঈদ

প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদের দিন কোরবানি শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই দক্ষিণ পাইক পাড়ার বিভিন্ন সড়ক ও গলিপথে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়।

ক্লাবের পক্ষ থেকে আগেই এলাকাবাসীকে নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দিতে অনুরোধ জানানো হয় এবং সচেতনতা বাড়াতে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হয়।

ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জানান,

“আমরা চাই না আমাদের এলাকা দুর্গন্ধে ভরে উঠুক। তাই প্রতি বছর ঈদের দিন সকলে মিলে একটি পরিকল্পিত পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নামি।”

নেতৃত্ব ও উদ্বোধন

সকাল ১১টায় ক্লাব প্রাঙ্গণে পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধন করেন ক্লাব নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক কমিটির সভাপতি মোঃ হুমায়ুন কবির ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার বাবু।

পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধন

নাগরিক কমিটির সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন,

“এলাকার পরিবেশ রক্ষা শুধু সরকারের কাজ নয়—এটি আমাদের সবার দায়িত্ব। অগ্রদূত ক্লাব এটি করে দেখিয়েছে। এটি দক্ষিণ পাইক পাড়ার গর্ব।”

ক্লাব কর্তৃপক্ষ ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী

স্বাস্থ্য সচেতনতায় অতুলনীয় ভূমিকা

পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শেষে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয় প্রতিটি স্পটে। এই বিষয়টি এলাকাবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

শিক্ষাবিদ মাইনুল হক বলেন,

“অগ্রদূত ক্লাবের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সচেতনতা কার্যক্রম অত্যন্ত প্রশংসনীয়। শুধুমাত্র বর্জ্য অপসারণ নয়—পরবর্তী জীবাণুনাশক ব্যবস্থাও তারা নিয়মিত বাস্তবায়ন করে, যা অনেক এলাকার জন্যই অনুকরণীয়।”

পরিবেশ রক্ষায় সচেতন সংগঠন

এলাকার পরিবেশ রক্ষায় অগ্রদূত ক্লাবের সদস্যরা সবসময় সোচ্চার। বছরের অন্যান্য সময়েও তারা বৃক্ষরোপণ, ড্রেন পরিষ্কার, খোলা জায়গা পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সচেতনতা সভা আয়োজন করে। এ কারণে দক্ষিণ পাইক পাড়া ধীরে ধীরে একটি পরিচ্ছন্ন, সচেতন নাগরিক এলাকার রূপ নিয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিমত

স্থানীয় বাসিন্দা গৃহবধূ শারমিন সুলতানা বলেন,

“ঈদের দিন সন্ধ্যায় বাইরে বের হয়ে দেখি রাস্তায় কোনো দুর্গন্ধ নেই। এমন পরিষ্কার পরিবেশে ঈদের আনন্দই আলাদা।”

ব্যবসায়ী আবুল খায়ের মিয়া বলেন,

“এত নিয়মিতভাবে যে একটি সংগঠন কাজ করে যেতে পারে, তা আগে ভাবিনি। অগ্রদূত ক্লাব শুধু ক্লাব নয়—এলাকার আশীর্বাদ।”

একজন তরুণ শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন,

“আমি নিজেও ক্লাবের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছি। নিজের এলাকার জন্য কিছু করতে পারা খুব ভালো লেগেছে।”

অগ্রদূত ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা, নারী-শিশু সহায়তা, আইটি প্রশিক্ষণ ও সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে একটি শক্তিশালী, সংগঠিত ও মানবিক সমাজ গঠনে কাজ করাই তাদের লক্ষ্য।

নগর জীবনে যে সমস্ত সামাজিক সংগঠন শুধুমাত্র উৎসব নয়—বরং দায়িত্ব ও চেতনায় এগিয়ে আসে, অগ্রদূত ক্লাব তাদের মধ্যে অন্যতম। দক্ষিণ পাইক পাড়ায় তাদের কাজ এখন শুধু একটি পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সীমাবদ্ধ নয়—এটি হয়ে উঠেছে নাগরিক দায়বদ্ধতার একটি সফল ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন