শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ফের ইসরায়েলি হামলায় গাজায় একদিনে নিহত ১১৫ ফিলিস্তিনি, আহত ২১৬

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১১৫ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২১৬ জন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা এই তীব্র বোমাবর্ষণে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, কারণ বহু মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন।

এই হামলা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া সংঘাতের ধারাবাহিকতায় পরিচালিত হচ্ছে। ওইদিন হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলের অভ্যন্তরে অন্তত ১,২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জন জিম্মি হন। সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করে, যার পর থেকে এ পর্যন্ত গাজা জুড়ে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।

মানবিক বিপর্যয় চরমে

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুধু গত দুই মাসে (১৮ মার্চ থেকে ১৭ মে পর্যন্ত) ইসরায়েলি অভিযানে ২,৯৮৫ জন নিহতএবং ৮,১৭৩ জন আহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫৩,১১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,২০,২১৪ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।

আহত ও নিহতদের অনেকে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। হাসপাতালগুলোর বেশিরভাগই অবকাঠামোগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, ওষুধ ও বিদ্যুতের অভাবে কার্যত অচল। ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারকাজও ব্যাহত হচ্ছে ইসরায়েলি ড্রোন ও স্থল অভিযানের কারণে।

বেসামরিক এলাকায় হামলা

সাম্প্রতিক একদিনের হামলাতেও লক্ষ্য ছিল কেবল সামরিক স্থাপনা নয়, বেসামরিক আবাসিক এলাকা, হাসপাতালসংলগ্ন ভবন এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোকেও টার্গেট করা হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। গাজা সিটির জাবালিয়া ও খান ইউনিস অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও আইনি পদক্ষেপ

জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংগঠন ও বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র বারবার ইসরায়েলকে সামরিক অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানালেও ইসরায়েল এখনো কঠোর অবস্থানে অনড়। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-এ ইতিমধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, “হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস এবং সব জিম্মিকে মুক্ত না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।”

এদিকে ধারণা করা হচ্ছে, এখনো হামাসের হাতে অন্তত ৩৫ জন জিম্মি জীবিত রয়েছেন, যাদের উদ্ধারের জন্য আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) অভিযান অব্যাহত রাখবে।

অবরোধে ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজা

ইসরায়েলি অবরোধে বিদ্যুৎ, পানি, খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রীর প্রবেশ বন্ধ থাকায় গাজা এখন কার্যত একটি মানবিক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ একে “সম্পূর্ণ মানবিক বিপর্যয়” বলে অভিহিত করেছে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।

তথ্যসূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, আল-জাজিরা


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন