শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

সামাজিক মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বললেই গ্রেপ্তার

সরকারের আদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর দলটির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে আর কোনো আইনি জটিলতা থাকছে না বলে জানিয়েছে পুলিশ। এতদিন আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা না থাকায় মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা অনেক সময় দ্বিধায় ভুগলেও এখন তাদের সরাসরি আইনি ভিত্তি মিলেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সোমবারই (আজ) সরকারি আদেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষণা করা হচ্ছে। এরপর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা পাঠানো হবে যাতে দলের পক্ষে সমাবেশ, মিছিল বা গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা যায়।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, “নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো কার্যক্রম ঢাকা রেঞ্জে চলতে দেওয়া হবে না। এসপিদের এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।” এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, “কাগজে-কলমে আদেশ জারির আগেই আওয়ামী লীগ কার্যত নিষিদ্ধ দলের তালিকায় রয়েছে।” ফলে দলের পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্য বা গোপনভাবে পোস্ট, মন্তব্য বা ভিডিও প্রচার করলেও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাইবার অপরাধ দমন শাখার এক কর্মকর্তা জানান, “ফেসবুক-ইউটিউবে যদি কেউ আওয়ামী লীগের পক্ষে কিছু বলেন, পোস্ট দেন বা মন্তব্য করেন—even বিদেশে বসেও—তাহলেও সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে দেশে ফিরলেই গ্রেপ্তার করা হবে।”

সাবেক আইজিপি নূরুল হুদা বলেন, “নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যদের গ্রেপ্তারে আর কোনো প্রশ্ন বা আইনি প্রতিবন্ধকতা নেই।” তিনি বলেন, সরকারের জারি করা আদেশ এখন পুলিশকে সম্পূর্ণ আইনি বৈধতা দিয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম জানান, “পেনাল কোডের ১৮৮ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি আদেশ অমান্যকারীদের ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। এখন সেই ধারাতেই গ্রেপ্তার ও শাস্তি কার্যকর হবে।”

এদিকে, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, শুধু অফলাইনে নয়, অনলাইনেও আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সাইবার স্পেসে দলটির উপস্থিতি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, “পরিপত্র জারির পর বিটিআরসি মেটা, ইউটিউব, টুইটারসহ সব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে চিঠি পাঠাবে যাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব ধরনের ডিজিটাল উপস্থিতি নিষিদ্ধ করা হয়।”

বর্তমানে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামের দলটির ফেসবুক পেজে প্রায় ৪০ লাখ ফলোয়ার রয়েছে, যা সরকারি নিষেধাজ্ঞার আওতায় তালিকাভুক্ত করে বন্ধ করা হবে বলে জানা গেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সরকার এ ধরনের কঠোর অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক ও ডিজিটাল পরিসরে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব মুছে ফেলতে যাচ্ছে, যা দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন