বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

রাবেয়া বসরী (রহ.): আল্লাহপ্রেম ও ত্যাগের এক উজ্জ্বল নাম

রাবেয়া বসরী (রহ.) ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে একজন খ্যাতনামা সুফি সাধিকা, যিনি আধ্যাত্মিক সাধনা, নিঃস্বার্থ ইবাদত এবং নিখাদ আল্লাহপ্রেমের মাধ্যমে অমর হয়ে আছেন। মুসলিম নারী সাধকদের মধ্যে তিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ, যাঁর জীবন এখনও বিশ্বের লক্ষ কোটি মানুষকে অনুপ্রেরণা দেয়।

রাবেয়ার জন্ম হয়েছিল ৭১৩ খ্রিস্টাব্দে, ইরাকের বসরা নগরীতে। তার পরিবার ছিল দরিদ্র, এবং তিনি ছিলেন পিতামাতার চতুর্থ কন্যা সন্তান—সেখান থেকেই তার নাম ‘রাবেয়া’। ছোটবেলাতেই তিনি অনাথ হন এবং একসময় অপহৃত হয়ে দাসীতে পরিণত হন। তার জীবনের এই কঠিন সময়ই ভবিষ্যতের আধ্যাত্মিক সাধনার প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে।

পরবর্তীতে তার ঈশ্বরভক্তি ও চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে তার মালিক তাকে মুক্তি দেন। এরপর তিনি সংসার বা বৈষয়িক জীবনে না গিয়ে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইবাদত ও ধ্যানমগ্নতায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি কোনো দিন বিয়ে করেননি, বরং সারাজীবন কাটিয়েছেন আল্লাহর প্রেমে আত্মসমর্পণ করে।

রাবেয়া বসরী (রহ.)-এর ইবাদতের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল বিপ্লবী ও অনন্য। তিনি আল্লাহর ইবাদত করতেন জান্নাত লাভের আশায় বা জাহান্নাম থেকে বাঁচার ভয়ে নয়—বরং শুধুমাত্র আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার জন্য। তাঁর বিখ্যাত উক্তি, “আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমার জন্যই, কোনো পুরস্কারের জন্য নয়,” আজও বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে।

তার জীবনে দুনিয়ার প্রতি কোনো মোহ ছিল না। তিনি ধৈর্য, ত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করতেন। তার জীবনাচার, দানশীলতা ও চিন্তাধারা পরবর্তী যুগের বহু সুফিকে প্রভাবিত করে। হাসান বসরী (রহ.)-এর মতো বিখ্যাত সুফিরাও তার উপদেশ গ্রহণ করতেন।

রাবেয়া বসরী (রহ.) ৮০১ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। তিনি শুধুমাত্র একজন নারী সাধিকা নন, বরং ঈমান, ইখলাস ও ইবাদতের এমন এক প্রতীক, যিনি যুগ যুগ ধরে মানুষের অন্তর জয় করে চলেছেন।

রাবেয়া বসরীর জীবন আমাদের শেখায়, আল্লাহর প্রেমই হলো সকল সাধনার চূড়ান্ত লক্ষ্য। তাঁর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, ত্যাগ ও সাধনার আদর্শ আজকের সমাজে বিশ্বাস, নৈতিকতা এবং আত্মশুদ্ধির পথ দেখায়।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন