শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

গাজায় সহায়তা পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের নতুন পরিকল্পনা, জাতিসংঘের প্রত্যাখ্যান

গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এক যৌথ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা প্রাথমিকভাবে গাজার প্রায় ৬০ শতাংশ জনগণের কাছে সহায়তা পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে শুরু হবে। তবে জাতিসংঘ ও প্রধান মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো এই পরিকল্পনাকে “মানবিক মানদণ্ডের লঙ্ঘন” ও “জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির হাতিয়ার” হিসেবে বর্ণনা করে তীব্র বিরোধিতা জানিয়েছে।

এই পরিকল্পনার আওতায় গঠিত হয়েছে “Gaza Humanitarian Foundation” নামের একটি বেসরকারি সংস্থা, যেটি যুক্তরাষ্ট্র পরিচালনা করবে। এই সংস্থার মাধ্যমে চারটি কেন্দ্রে খাদ্য, ওষুধ ও স্বাস্থ্যসামগ্রী বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব কেন্দ্র নিরাপত্তা দেবে মার্কিন বেসরকারি সামরিক ঠিকাদাররা, এবং বাইরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখভাল করবে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে মানবিক সংস্থাগুলোর দাবি, গাজায় বর্তমানে ৪০০টির বেশি বিতরণ কেন্দ্র দরকার, যেখানে এই পরিকল্পনায় মাত্র চারটি কেন্দ্র রাখা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি বলেন, “এই পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো নিশ্চিত করা যাতে হামাস কিংবা প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ এই সাহায্যের কোনো অংশ নিতে না পারে।” তবে তিনি স্বীকার করেন, এটি শুরুর দিকে পুরোপুরি কার্যকর হবে না এবং ভবিষ্যতে “স্কেল আপ” করা হবে।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস (OCHA) জানায়, এই পরিকল্পনা “বাস্তবতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী এবং গাজার জনগণের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হবে।” তাদের মতে, এই ব্যবস্থায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের বহু দূর হাঁটতে হবে, যা শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের জন্য মারাত্মক কষ্টকর।

হামাস এই পরিকল্পনাকে “ক্ষুধার্ত করে নিয়ন্ত্রণ ও উচ্ছেদের একটি অস্ত্র” বলে আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

গাজার সহায়তা সংস্থাগুলোর জোটের পরিচালক আমজাদ আল-শাওয়া বলেন, “এই প্রক্রিয়া আমাদের জনগণের মৌলিক মানবিক অধিকারকে সম্মান করে না, এবং আমরা এ সম্পর্কে কোনো তথ্যই পাইনি।”

এদিকে UNRWA জানিয়েছে, গাজায় খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ, এমনকি শিশুদের টিকাও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এজেন্সিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই সংকট সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে শিশু, নারী ও প্রবীণদের।”

যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় অংশ নিতে কিছু ব্যক্তি ও সংগঠনের নাম উঠে এসেছে। যেমন—Team Rubicon-এর প্রাক্তন সিইও নির্বাহী পরিচালক হতে পারেন এবং World Central Kitchen-এর সাবেক প্রধান Nate Mook পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারেন। তবে এখনো অনেক অংশ চূড়ান্ত হয়নি।

ইসরায়েলি উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী শারেন হেস্কেল CNN-কে বলেন, “গাজার পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্টগুলো যতটা বলছে, বাস্তবে তা নয়” এবং দুর্ভিক্ষের অভিযোগকে “সম্পূর্ণ মিথ্যা” বলেন তিনি।

সব মিলিয়ে, গাজার মানবিক সংকট সমাধানে এই নতুন উদ্যোগ নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই অগ্রগতি হচ্ছে, তবে বড় মানবিক সংস্থাগুলোর বিরোধিতা ও বাস্তব জটিলতা এই পরিকল্পনাকে কার্যকর করে তুলবে কি না, তা এখনো প্রশ্নের মুখে।

বিজ্ঞাপন


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন