শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

আন্ডারওয়ার্ল্ড দ্বন্দ্বে শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন খুন: দুই লাখ টাকার চুক্তিতে হত্যায় অংশ শুটাররা, ডিবির হাতে গ্রেপ্তার পাঁচ

রাজধানীর পুরান ঢাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুন (৫৫) হত্যা মামলায় জড়িত দুই পেশাদার শুটারসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। হত্যাকাণ্ডটি আন্ডারওয়ার্ল্ডের দীর্ঘদিনের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি।

দুই শুটারসহ গ্রেপ্তার পাঁচ

গ্রেপ্তার শুটাররা হলেন— ফারুক ওরফে কুত্তা ফারুক এবং রবিন।

এ ছাড়া সহযোগী হিসেবে ধরা পড়েছেন— ইউসুফ, রুবেল ও শামীম।

বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, হত্যায় ব্যবহৃত দুটি পিস্তল, নগদ টাকা এবং ঘটনাস্থল থেকে পালাতে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।

ইমন–মামুন গ্রুপের দ্বন্দ্ব থেকে হত্যার সূত্রপাত

ডিবির ভাষ্য অনুসারে, ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে ইমন–মামুন নামে পরিচিত দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর বিরোধ থেকেই হত্যার পরিকল্পনা শুরু হয়। মূল পরিকল্পনাকারী রনি— যিনি কখনো মুদি দোকান চালালেও বর্তমানে কাফরুল এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। ইমনের হয়ে মামুনকে হত্যার বিনিময়ে রনি দুই লাখ টাকা প্রদান করেন এবং অস্ত্র সরবরাহ করেন।

রনি এখনো পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তারের অভিযান চলমান।

হত্যার দিন আদালত এলাকায় ওত পেতে ছিল শুটাররা

ডিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই চলছিল। কয়েক দফা চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ১০ নভেম্বর— যেদিন মামুনের একটি মামলায় আদালতে হাজিরার তারিখ ছিল, সেই দিনটিকেই টার্গেট করা হয়।

আগের দিন রাতে রনি নিজ বাসায় রবিনকে ডেকে চূড়ান্ত নির্দেশনা দেন। পরদিন সকালে রনি ফোনে শুটারদের আদালত এলাকায় পৌঁছানোর নির্দেশ দেন।

সকাল ১০টার দিকে রবিন তার বন্ধু শামীমের মোটরসাইকেলে আদালত এলাকায় যায়। একই সময়ে ফারুক, সুমন এবং কামালও সেখানে অবস্থান নেন।

প্রথমে গুলি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সুমনকে। কিন্তু রনির সঙ্গে বিরোধ দেখা দিলে তাঁর কাছ থেকে দুটি পিস্তল নিয়ে একটি ফারুক এবং অন্যটি রবিনকে দেন রনি।

নজর রাখে ‘স্পটার’ কামাল

মামুন আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলে ‘স্পটার’ (গতিবিধি পর্যবেক্ষক) হিসেবে থাকা কামাল রনিকে সংকেত পাঠায়। সংকেত পাওয়ার পর ফারুক ও রবিন দ্রুত এগিয়ে এসে মামুনকে লক্ষ্য করে একের পর এক গুলি চালায়।

গুরুতর আহত মামুনকে প্রথমে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

অস্ত্র লুকিয়ে রাখা হয় দর্জির বাড়িতে

হত্যাকাণ্ডের পর শুটাররা রায়েরবাজারে পৌঁছে রনির নির্দেশে অস্ত্রগুলো রুবেলের কাছে হস্তান্তর করেন। রুবেল পরে অস্ত্রভর্তি ব্যাগ মোহাম্মদপুরের দর্জি ইউসুফের বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন।

ইউসুফের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে—

• দুটি বিদেশি পিস্তল

• ছয় রাউন্ড গুলি

• দুটি ম্যাগাজিন

গ্রেপ্তার ইউসুফ ও রুবেল দুজনই স্বীকার করেছেন যে তারা অস্ত্র লুকিয়ে রাখতে সহায়তা করেছিলেন।

ভারতের উদ্দেশে পালানোর চেষ্টা, পথে ধরা

হত্যাকাণ্ডের পর রনির নির্দেশে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেল ঢাকা ছেড়ে সিলেটে যায় এবং সেখান থেকে ভারত পালানোর পরিকল্পনা করে। কিন্তু সীমান্ত পাড়ি দিতে ব্যর্থ হয়ে সাতক্ষীরা হয়ে ঢাকায় ফেরার চেষ্টা করলে গোয়েন্দা পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

মঙ্গলবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে নরসিংদীর ভেলানগর এলাকা থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় রনির দেওয়া ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪০ টাকা, যা ছিল হত্যাকাণ্ডের পারিশ্রমিক।

“পুরোনো আন্ডারওয়ার্ল্ড দ্বন্দ্বেরই পরিণতি”—ডিবি

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন—

“মামুন ও ইমন দুজনই ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে প্রভাবশালী সন্ত্রাসী। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের পুরোনো দ্বন্দ্ব থেকেই এই হত্যাকাণ্ডের জন্ম। মূল পরিকল্পনাকারী রনি এখনো পলাতক। তাঁকে ধরতে অভিযান চলছে।”


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন