শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

১৩ নভেম্বরের রায়কে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ সতর্কতা—ঢাকাজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা, নাশকতা ঠেকাতে মাঠে র‍্যাব–পুলিশ–বিজিবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের তারিখ আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর)। এই রায়কে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ। গত কয়েক দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ, ঝটিকা মিছিল ও রাতের অন্ধকারে সহিংস তৎপরতায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ঘটনাগুলোর একটির আগুনে পুড়ে মারা গেছেন এক ঘুমন্ত বাসচালক। শহরের বাতাসে মিশে আছে ককটেলের রাসায়নিক গন্ধ, আর সড়কে সাঁজোয়া যান, র‌্যাব-পুলিশের মহড়া ও গোয়েন্দা বাহিনীর কড়া নজরদারি।

রাজধানীতে নীরব আতঙ্ক—স্কুলে অনলাইন ক্লাস, রাস্তায় কম যানবাহন

পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে স্কুল–কলেজের অনেকেই অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সন্ধ্যার পর ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে ঢাকার রাস্তা। নিত্যপ্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। চায়ের দোকান থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আজকের দিনটি: ১৩ নভেম্বর কী ঘটতে যাচ্ছে?

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘হাই অ্যালার্ট’—চোরাগোপ্তা হামলা ঠেকাতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি

পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি, এনএসআই, ডিজিএফআইসহ সব সংস্থা সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। বুধবার পুলিশ সদর দপ্তরে এক বিশেষ বৈঠকে মাঠপর্যায়ের সব ইউনিটকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত আইজিপি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম।

সভায় জানানো হয়, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মীরা ঢাকায় ঝটিকা মিছিল, ককটেল হামলা, অগ্নিসংযোগ, ওয়েবসাইট হ্যাকিং, এআই ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর ছবি–ভিডিও ছড়ানোসহ চোরাগোপ্তা তৎপরতায় নামতে পারে। আদালত প্রাঙ্গণেও নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। এসব তৎপরতার লক্ষ্য—আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ, বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি ও আতঙ্ক ছড়ানো।

গ্রামীণ ব্যাংকে বিশেষ নজর—দেশজুড়ে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি

আইজিপি বাহারুল আলম যুগান্তরকে জানান, র‌্যাব–পুলিশ–সেনা–বিজিবি সব বাহিনী সমন্বিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠে রয়েছে। গাড়িতে আগুন ও ককটেল হামলা ঠেকাতে বিশেষ অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রামীণ ব্যাংকের শাখাগুলোতে হামলার আশঙ্কায় দেশের সব জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও ইউএনওদের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

রাজধানীর সব প্রবেশপথে চৌকি—বিমানবন্দরসহ কেপিআইভুক্ত স্থাপনায় কঠোর নিরাপত্তা

সূত্র জানায়, ঢাকার প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। তল্লাশি ছাড়া কেউ ঢুকতে পারছে না। বিমাবন্দর, সচিবালয়, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, রেলওয়ে, হাসপাতাল, টিভি সেন্টার, শপিংমল, মসজিদ–মন্দিরসহ কেপিআই এলাকা বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে। পুলিশ সদস্যদের মোবাইল ফোন ব্যবহারেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

হোটেল–মোটেল অভিযান, সাইবার নজরদারি, রাতভর প্যাট্রোলিং

রাজধানীজুড়ে হোন্ডা প্যাট্রোলিং, ফুট প্যাট্রোলিং এবং হোটেল–মোটেলে অভিযান চলছে। সাইবার টিম ২৪ ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করছে।

মাসব্যাপী ধরপাকড়—গ্রেপ্তার ১৫০০–২০০০, শুধু ঢাকায় ৪৪ জন

সূত্র জানায়, নাশকতার পরিকল্পনা, অগ্নিসংযোগ ও ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়ার অভিযোগে গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন দেশজুড়ে ১,৫০০ থেকে ২,০০০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন—যারা অধিকাংশই কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় ডিবি পুলিশ ঢাকায় গ্রেপ্তার করেছে ৪৪ জনকে। মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দলটির বিরুদ্ধে ২৪৭টি নাশকতার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে; গ্রেপ্তার ৭২২ জন। বুধবার ফরিদপুরে পেট্রোলবোমা তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেপ্তার হয়েছে দলটির তিন সদস্য।

সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভেদ—ঢাকার যেসব এলাকা ‘সুপার হাই রিস্ক’

ডিএমপি সূত্র জানায়, মৎস্যভবন, কাকরাইল চার্চ, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, সচিবালয়, কাকরাইল মসজিদ, ইন্টারকন্টিনেন্টাল, শহীদ মিনার, নগরভবন, স্টক এক্সচেঞ্জ, কোর্ট এলাকা, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, রামপুরা টিভি সেন্টার, ক্যান্টনমেন্ট, এক্সপ্রেসওয়ে, শাপলা চত্বর, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, বিমানবন্দর—এসব স্থানে বিশেষ নিরাপত্তা বলয় স্থাপন করা হয়েছে।

ঢাকায় আতঙ্ক নেই—সতর্ক থাকুন: ডিএমপি কমিশনার

ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, “নাশকতা করে কেউ পার পাবে না। আমরা এমন প্রস্তুতি নিয়েছি যে অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করলেই ধরা পড়বে। জনগণকে বলবো—আতঙ্কিত হবেন না।”


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন