শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

তরুণদের ১৯.৬% বিএনপি, ১৬.৯% জামায়াত ও ৩.৬% এনসিপিকে ভোট দিতে আগ্রহী: বিওয়াইএলসি জরিপ

আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেশের তরুণ ভোটারদের বড় একটি অংশ বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির প্রতি ঝুঁকছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের (বিওয়াইএলসি) নতুন জরিপ ‘ইয়ুথ ম্যাটারস সার্ভে ২০২৫’। বুধবার রাজধানীর মহাখালীতে বিওয়াইএলসির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ফল প্রকাশ করা হয়।

জরিপ অনুযায়ী, ১৯.৬ শতাংশ তরুণ আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে ভোট দিতে চান। জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন করছেন ১৬.৯ শতাংশ এবং এনসিপিকে সমর্থন করছেন ৩.৬ শতাংশ তরুণ। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করছেন মাত্র ৯.৫ শতাংশ। এ ছাড়া ৩০ শতাংশ তরুণ এখনো সিদ্ধান্তহীন, আর ১৭.৭ শতাংশ পছন্দের দলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

বিওয়াইএলসি জানায়, তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক অবস্থান ও ভবিষ্যৎ ভাবনা বোঝার লক্ষ্যে সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জরিপটি পরিচালিত হয়। দেশের আট বিভাগ, ২৭ জেলা ও ১৭৫টি প্রাথমিক নমুনা ইউনিটে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী মোট ২,৫৪৫ জন তরুণ এতে অংশ নেন। ১০ থেকে ২১ অক্টোবরের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া এই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৯ শতাংশ নিবন্ধিত ভোটার এবং ৯৭.২ শতাংশ ভোট দিতে আগ্রহী বলে জানান।

জরিপে দেখা যায়, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তরুণদের আস্থা তুলনামূলক বেশি। ৪৯.৮ শতাংশ তরুণ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা বেশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আশা করেন। ৬৩.১ শতাংশ জানিয়েছেন, আগের সরকারের তুলনায় এখন তারা সামাজিক মাধ্যম এবং জনসমক্ষে মতামত প্রকাশে আরও নিরাপদ বোধ করেন।

ছাত্র রাজনীতি নিয়ে তরুণদের দ্বিধাদ্বন্দ্বও উঠে এসেছে জরিপে। ৫২.৬ শতাংশ তরুণ মনে করেন, ছাত্র রাজনীতি শিক্ষাঙ্গনের স্বাভাবিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর মধ্যে ৪৮ শতাংশ রাজনৈতিক প্রভাব, ২৩.৮ শতাংশ সহিংসতা এবং ১১.১ শতাংশ ক্ষমতার অপব্যবহারকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

দেশের আগামী পাঁচ বছরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার বিষয়ে প্রশ্নে ৬৭.১ শতাংশ তরুণ দুর্নীতি নির্মূলকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। সামাজিক সম্প্রীতি বিষয়ে ৬৫.৩ শতাংশ মনে করেন দেশে এখনও ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রীতি রয়েছে। তবে ৭৬ শতাংশ মনে করেন নারীদের নিরাপত্তাহীনতা দেশের একটি গুরুতর সমস্যা এবং তাৎক্ষণিক নীতি মনোযোগ প্রয়োজন।

তরুণদের চাকরি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায়ও উল্লেখযোগ্য তথ্য উঠে এসেছে। ৩৯.১ শতাংশ তরুণ উদ্যোক্তা হতে চান বলে জানিয়েছেন। ১৮.৩ শতাংশ বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন—যার অন্যতম কারণ কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ ও সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা। অন্যদিকে ৫৯.৬ শতাংশ তরুণ মনে করেন, সামাজিক মাধ্যম দেশের বাস্তব চিত্র সঠিকভাবে প্রতিফলিত করে না।

চ্যালেঞ্জ ও অনিশ্চয়তার মাঝেও তরুণদের মধ্যে আশাবাদ প্রবল। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬১.৭ শতাংশ দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ইতিবাচক ও আশাবাদী বলে জানিয়েছেন। তাদের মতে, ধীরে ধীরে দেশ উন্নতির পথে এগোচ্ছে, এবং সঠিক নীতি প্রণয়ন হলে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে বিওয়াইএলসির নির্বাহী পরিচালক তাহসিনাহ আহমেদ বলেন, তরুণরা এখন রাজনৈতিকভাবে সচেতন এবং সামাজিকভাবে জাগ্রত। তাদের মতামত নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া এখন জরুরি। ভয়েস ফর রিফর্মের সহসমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর বলেন, চাকরির সংকট উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা বাড়াচ্ছে, তবে প্রয়োজন প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষার বলেন, হতাশার মাঝেও তরুণদের ইতিবাচক মনোভাবই দেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার পরিচায়ক।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন