শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

নির্বাচনের আগে ভাঙন মেরামতে ব্যস্ত বিএনপি, বহিষ্কৃতদের ফিরিয়ে মনোনয়ন দিচ্ছে দলটি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় ভাঙন মেরামত ও তৃণমূল সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করতে বড় ধরনের সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাসে নেমেছে বিএনপি। একসময় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির অভিযোগে বহিষ্কৃত হওয়া নেতাকর্মীদের দলে ফিরিয়ে নিচ্ছে দলটি। ইতোমধ্যে বহিষ্কৃত ছয় নেতাকে পুনর্বহাল করে তাদের মনোনয়নও দেওয়া হয়েছে, এবং সর্বশেষ ধাপে একসঙ্গে আরও ৪০ জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় বিএনপি তৃণমূল পর্যায়ে পুনরায় শক্তি সঞ্চারে মনোযোগী হয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে দলে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, তবে তাদের মধ্যে অনেকে আবেদন করে ভুল স্বীকার করায় ধাপে ধাপে পুনর্বহাল করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৮০ জন তৃণমূল নেতাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, যাদের কয়েকজনকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীও করা হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “যারা বহিষ্কৃত ছিলেন, তারা মূলত দলের ত্যাগী কর্মী—বিগত সময়ে জেল-জুলুম ও নির্যাতন সহ্য করেছেন। অনেকেই ভুল স্বীকার করে দলের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন, তাই যাচাই-বাছাই শেষে তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “এখনো যদি কেউ মনোনয়ন নিয়ে বিশৃঙ্খলা করে, মশাল মিছিল বা অবরোধ ঘটায়, তারা দলের কর্মী হিসেবে বিবেচিত হবে না। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবার সঙ্গে আলোচনা করে স্পষ্ট করেছেন—এক আসনে একজনই প্রার্থী পাবেন, যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট টানতে সক্ষম।”

দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি বিএনপি সাংগঠনিক সংহতি জোরদারে কৌশলগতভাবে কাজ করছে। নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ এখন কার্যত রাজনৈতিক মাঠে অনুপস্থিত এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামী প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে পুরোনো কর্মীদের পুনর্বহালকে কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে দলটি।

তৃণমূল নেতারা বলছেন, বহিষ্কৃত নেতাদের ফিরে আসায় স্থানীয় পর্যায়ে দলের কর্মপ্রচেষ্টা বাড়ছে। অনেকে ইতোমধ্যে এলাকায় সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেছেন। ফলে নির্বাচনি মাঠে বিএনপির সংগঠন আগের তুলনায় প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।

বিএনপি সম্প্রতি ২৩৭টি আসনে প্রাথমিকভাবে একক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। দলের তথ্য অনুসারে, নির্বাচনি সহিংসতা ও সংঘর্ষের কারণে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মীকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে নতুন করে বহিষ্কার করা হয়েছে। শুধু গত সপ্তাহেই প্রার্থিতা নিয়ে ১৯টি আসনে সংঘর্ষ, অবরোধ ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।

এমন পরিস্থিতিতে দলীয় পর্যবেক্ষণ টিম মাঠপর্যায়ের তথ্য যাচাই করে দেখছে। দলীয় নেতাদের মতে, কোথাও সংঘর্ষ ঘটলে সেটি শুধুমাত্র প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ থেকে হয়েছে—যা নির্বাচনের আগে সমাধান করা সম্ভব।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিম ভূঁইয়া বলেন, “বহিষ্কার প্রত্যাহার দলের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত। কিন্তু এখন যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে, তাদের বিষয়ে আমরা শূন্য সহনশীল নীতি গ্রহণ করেছি। কেউ দলীয় নির্দেশনা অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

দলের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পর চট্টগ্রাম–১ এ নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, ময়মনসিংহ–১১ এ ফকর উদ্দিন আহমেদ, পিরোজপুর–৩ এ রুহুল আমিন দুলাল, রংপুর–১ এ মোকাররম হোসেন সুজন, রংপুর–২ এ মোহাম্মদ আলী সরকার এবং খুলনা–২ এ নজরুল ইসলাম মঞ্জু বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও কিশোরগঞ্জ–৪ এ মো. ফজলুর রহমানকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যার স্থগিতাদেশ শিগগিরই প্রত্যাহার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফেরানো এবং একযোগে সাংগঠনিক ঐক্য জোরদার করার এই পদক্ষেপ বিএনপির জন্য নির্বাচনি মাঠে তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ বিভাজন কাটিয়ে দলটি এখন ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার দিকেই অগ্রসর হচ্ছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন