শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

টেকনাফের পাহাড়ে পাচারকারীদের সুরক্ষিত ডেরায় বিজিবির ‘বজ্র’ হানা : মৃত্যুফাঁদ ভেঙে ৬ জিম্মি মুক্ত, গোপন আস্তানা গুঁড়িয়ে বিপুল অস্ত্র উদ্ধার

২১ অক্টোবর ২০২৫, টেকনাফ

দেশের সীমান্ত সুরক্ষা ও মাদক–মানব পাচার প্রতিরোধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। এই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) আজ ভোরে পরিচালনা করেছে এক দুঃসাহসিক অভিযান—যার মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছে পাচারকারীদের হাতে জিম্মি থাকা ৬ নিরীহ ভুক্তভোগী এবং গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পাহাড়ে স্থাপিত একটি সুরক্ষিত পাচারকারীর ডেরা। এ সময় একজন পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয় এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।

অভিযানের বিবরণ

২১ অক্টোবর ভোরে ২ বিজিবির অর্ধশতাধিক সদস্যের একটি বিশেষ আভিযানিক দল টেকনাফ উপজেলার রাজারছড়া করাচিপাড়া এলাকার গহীন পাহাড়ে মানব পাচারকারীদের আস্তানায় ‘বজ্র অভিযান’ চালায়।

বিজিবির আকস্মিক উপস্থিতি টের পেয়ে পাচারকারীরা পালানোর চেষ্টা করলে, সদস্যরা পাহাড়কে ঘিরে ফেলে ছয় ঘণ্টাব্যাপী চিরুনি অভিযান চালান। এতে ১ জন পাচারকারী আটক ও ৬ জন জিম্মি মুক্ত হয়।

অভিযানে উদ্ধার করা হয়—

  • ০৩টি ওয়ান শুটার গান,
  • ০১টি একনলা বন্দুক,
  • ০৫ রাউন্ড তাজা গুলি (ওয়ান শুটার গানের),
  • ০১ রাউন্ড তাজা গুলি (একনলা বন্দুকের),
  • ০২টি দেশীয় চাকু।

উদ্ধারকৃত ভুক্তভোগীরা জানায়, স্থানীয় কিছু দালালের মাধ্যমে তাদের ৪০ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হয়েছিল সশস্ত্র পাচারকারীদের কাছে। এক সপ্তাহ ধরে পাহাড়ে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি ও শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছিল তাদের ওপর।

গ্রেফতার ও পলাতক পাচারকারীরা

আটককৃত পাচারকারী:

  • মোঃ রুবেল (২১), পিতা মোঃ হোছন, মাতা আনোয়ারা বেগম; গ্রাম: করাচীপাড়া লেঙ্গুরবিল, পোস্ট: মিঠাপানিরছড়া, থানা: টেকনাফ, জেলা: কক্সবাজার।

পলাতক পাচারকারীরা (অনুসন্ধান চলছে):

আব্দুল্লাহ (২৬), রিয়াজ (৩০), মোঃ হোছন (৪৬), আনোয়ারা বেগম (৪০), রায়হান (২৪), জয়নাল (২৪), আব্দুল্লাহ (২৫), সিরাজ (২৬)—সবাই টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।

বিজিবির মন্তব্য

অভিযান শেষে টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আশিকুর রহমান, পিএসসি, বলেন—

“মানবতা ও দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কোনো পাচারকারীকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। এই অভিযান আমাদের অঙ্গীকারের প্রমাণ—বিজিবি কখনোই পিছপা হবে না। সীমান্তে মানব পাচার, মাদক ও অপহরণ চক্রের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

আটককৃত পাচারকারী ও উদ্ধারকৃত আলামত আইনানুগ প্রক্রিয়ায় টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পটভূমি

এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে একই ব্যাটালিয়ন পরিচালিত বিশেষ অভিযানে ৩ জন পাচারকারীকে আটক এবং ৮৪ জন ভুক্তভোগীকে মুক্ত করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই আজকের অভিযানটি পরিচালিত হয়।

বিজিবি জানায়, এই অভিযান মানব পাচারকারীদের জন্য এক কঠোর বার্তা—বাংলাদেশের সীমান্ত ও পাহাড় কোনো অপরাধীর নিরাপদ আশ্রয় নয়।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন