শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ঢাকার পূর্বাংশে নিশ্ছিদ্র ধোঁয়া: মান্ডার ময়লার ভাগাড়েই উৎস

রাতভর ব্যাটারি ও বর্জ্য পোড়ানোয় বিষাক্ত গ্যাসে দম বন্ধ শহরবাসীর

রাজধানীর পূর্ব দিকের আকাশ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঘন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকে, বিশেষ করে গভীর রাতে। রামপুরা, বনশ্রী, ডেমরা, মুগদা, বাসাবো, মান্ডা, সবুজবাগ ও খিলগাঁও অঞ্চলের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা ও বুকে চাপ অনুভব করছিলেন। অবশেষে এই বিষাক্ত ধোঁয়ার উৎস শনাক্ত হয়েছে—ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীন মান্ডা গ্রীন মডেল টাউনের পেছনে সামাদ নগর এলাকার বিশাল ময়লার ভাগাড়।

প্রতিদিন রাতেই ময়লা ও ব্যাটারি পোড়ানো হয়

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই ভাগাড়ে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে ময়লা-আবর্জনা ও রাসায়নিক বর্জ্যে আগুন দেওয়া হয়। আরও ভয়াবহ তথ্য হলো—এখানে পুরনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা সংগ্রহের অবৈধ কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় রাতভর পুরনো ব্যাটারি পোড়ানো হয়, যার আগুন কখনো কখনো ৩০ ফুট পর্যন্ত উঁচুতে ওঠে।

এই প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত মিথেন ও কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস নির্গত হচ্ছে, যা বাতাসে মিশে আশপাশের বিশাল অঞ্চলের পরিবেশকে ভয়াবহভাবে দূষিত করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন ধোঁয়ায় ফুসফুসের রোগ, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়ে।

অসহনীয় রাত ও নিস্তব্ধ প্রশাসন

বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, রাতে জানালা খোলা রাখলেই নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। অনেকের চোখে-পেটে জ্বালা, গলায় ব্যথা ও মাথা ঘোরা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের অবস্থা আরও নাজুক।

রামপুরার এক বাসিন্দা বলেন,

“রাতের পর রাত আকাশে ধোঁয়ার স্তর দেখা যায়। গন্ধ এমন যে ঘরে বসে থাকা যায় না। অথচ কেউ আসে না, কিছু করে না।”

দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এই ভাগাড়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও শিল্প কার্যক্রমের কোনো সরকারি অনুমোদন নেই বলে জানা গেছে। তবুও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় এলাকাবাসীর ক্ষোভ তীব্র হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি ও পদক্ষেপের দাবি

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধারাবাহিকভাবে ব্যাটারি পোড়ানো ও বর্জ্য দাহন থেকে নির্গত গ্যাসে ভারী ধাতু ও টক্সিন থাকে, যা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে লিভার, কিডনি ও ফুসফুসে স্থায়ী ক্ষতি ঘটাতে পারে।

পরিবেশবিদরা অবিলম্বে এই কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেছেন,

“মান্ডা ও আশপাশের এলাকাগুলোতে যে পরিমাণ বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হচ্ছে, তা ধীরে ধীরে একটি ‘সাইলেন্ট হেলথ ডিজাস্টার’-এ পরিণত হতে পারে।”

মানুষের আহ্বান: এখনই ব্যবস্থা নিন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছে—

“এত বড় এলাকায় এত লাখ মানুষ বাস করে, অথচ প্রশাসন চুপ কেন?”

পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিটি কর্পোরেশনের কাছে নাগরিকদের আহ্বান—

“আমাদের শ্বাস নেওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এখনই পদক্ষেপ নিন, এই বিষাক্ত ধোঁয়া বন্ধ করুন।”


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন