শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে “নতুন বাংলাদেশের” সূচনা হয়েছে—যা আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের পথে জাতিকে এগিয়ে নেবে।

শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক “জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫” স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন,

“আজ আমাদের জাতীয় জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। এই সনদ আমাদের অতীতের অন্যায় ও নৃশংসতার অবসান ঘটিয়ে এক আলোকিত ভবিষ্যতের দিগন্ত উন্মোচন করবে।”

তিনি বলেন, “এটি শুধু রাজনৈতিক নয়—এটি একটি নৈতিক পুনর্জন্মের দিন। যে তরুণরা জুলাই অভ্যুত্থানে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের আত্মত্যাগেই আজকের এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। এই তরুণ প্রজন্মই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্থপতি।”

ঐক্য, শৃঙ্খলা ও নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিশ্রুতি

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার ধরণে পরিবর্তন আনতেই জুলাই সনদ। এটি শুধু দলীয় ঐকমত্য নয়, জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।”

তিনি উল্লেখ করেন, “জুলাই সনদের সফল বাস্তবায়ন দেশের শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে এবং জাতীয় সম্পদের পূর্ণ ব্যবহারের পথ উন্মুক্ত করবে।”

বঙ্গোপসাগরের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের সমুদ্রসীমা অমূল্য সম্পদে ভরপুর। যদি আমরা শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারি, তাহলে এই সম্পদই হবে আমাদের উন্নয়নের ইঞ্জিন।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ যদি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে পারে, তাহলে বৈশ্বিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে আমরা আত্মপ্রকাশ করব। এতে কেবল বাংলাদেশ নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াই অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে।”

নির্বাচন হবে ঐক্যের সুরে

ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন,

“আমরা এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করতে চাই যা জাতির ঐক্যের প্রতিফলন ঘটাবে এবং বিশ্বের সামনে হবে একটি উদাহরণ। এই নির্বাচনে প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতা ও বিশ্বাসের পরিবেশই হবে আমাদের শক্তি।”

তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে আহ্বান জানান, “আজকের সনদ যেমন ঐক্যের পথে জাতিকে এক করেছে, তেমনি নির্বাচনও হোক সেই ঐক্যের ধারাবাহিকতা। আসুন, আমরা ঐক্যের সুরে এগিয়ে যাই।”

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভবিষ্যতের অঙ্গীকার

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের স্মরণ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন,

“আমরা তাঁদের ত্যাগ ও সাহসিকতার ঋণ চিরকাল বহন করব। তাঁরাই আমাদের ইতিহাসে নতুন সূর্যের আলো জ্বালিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “জুলাই সনদের মাধ্যমে আমরা নৃশংসতার অন্ধকার থেকে সভ্যতার আলোয় ফিরে এসেছি। এখন আমাদের দায়িত্ব এই পরিবর্তনকে স্থায়ী করা, যাতে আগামী প্রজন্ম একটি সুবিচারপূর্ণ সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে।”

অনুষ্ঠানের পরিবেশ ও প্রতিক্রিয়া

বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠান শুরু হয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসসহ কমিশনের সদস্যবৃন্দ ও রাজনৈতিক দলের নেতারা একযোগে সনদে স্বাক্ষর করেন।

অনুষ্ঠানে পরে প্রদর্শিত হয় “দ্য রোডম্যাপ অব ফিউচার” শিরোনামের একটি সাত মিনিটের প্রামাণ্যচিত্র, যেখানে অতীতের রাজনৈতিক দমন–পীড়ন, জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহ এবং সনদের লক্ষ্য তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠান শেষে প্রধান উপদেষ্টা সনদ স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও কমিশন সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং সম্মিলিত ফটোসেশনে অংশ নেন।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন