গাজা সংকটে যুগান্তকারী সমঝোতা: ট্রাম্পের কূটনৈতিক সাফল্যে যুদ্ধবিরতির পথে ইসরায়েল–হামাস
- প্রান্তকাল ডেস্ক
- অক্টোবর ১০, ২০২৫
প্রায় দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও ব্যর্থ আলোচনার পর গাজা যুদ্ধবিরতির এক ঐতিহাসিক চুক্তির ঘোষণা এসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে। এতে হামাসের হাতে বন্দি থাকা সকল জিম্মিকে মুক্ত করার পাশাপাশি ইসরায়েলের আংশিক সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এ চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ার এক যুগান্তকারী মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে—যা বাইডেন প্রশাসনের দীর্ঘ প্রচেষ্টায়ও সম্ভব হয়নি।
কূটনীতির অচলাবস্থা থেকে নতুন সম্ভাবনা
কাতারে গত সেপ্টেম্বর হামাস আলোচনাকারীদের ওপর ইসরায়েলি বিমান হামলার পর মনে করা হচ্ছিল শান্তির আশা শেষ। ওই হামলায় কাতারের এক নাগরিক নিহত হন, যা যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের সামিল ছিল।
তবে সেই ঘটনাই শেষ পর্যন্ত মার্কিন প্রশাসনের চাপ বাড়িয়ে ইসরায়েলকে আলোচনায় ফিরিয়ে আনে।
ট্রাম্প–নেতানিয়াহু সম্পর্ক ও পর্দার আড়ালের চাপ
ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সম্পর্ক শুরু থেকেই অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। প্রথম মেয়াদে তিনি দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নিয়ে যান, যা ইসরায়েলের জন্য ছিল বড় রাজনৈতিক জয়ের প্রতীক।
কিন্তু এবার সেই সম্পর্কই ট্রাম্প ব্যবহার করেন কূটনৈতিক চাপ হিসেবে। তার নিযুক্ত আলোচক স্টিভ উইটকফ ইসরায়েলকে মানবিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে সক্ষম হন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে সমর্থন দেখালেও আড়ালে অভূতপূর্ব কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এ ধরনের দৃঢ়তা অতীতে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট দেখাননি।
গালফ–ইউরোপ ঐক্যের প্রভাব
গাজা অভিযানে হাজারো বেসামরিকের মৃত্যু ও মানবিক বিপর্যয়ে ইউরোপীয় দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিরোধিতা শুরু করে। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির পক্ষে অবস্থান নেয়।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও সৌদি নেতৃত্বের অংশগ্রহণে আরব–ইউরোপীয় এক যৌথ শান্তি প্রস্তাব গঠিত হয়, যেখানে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজা শাসনের দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়।
ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত সেই প্রস্তাবের কয়েকটি মূল অংশ অন্তর্ভুক্ত করেন নিজের ২০ দফা পরিকল্পনায়, যা ইসরায়েল এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর সমর্থন পায়।
ব্যবসায়িক সম্পর্ক থেকে কূটনৈতিক সুবিধা
সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ট্রাম্পের পুরনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবার তার কূটনৈতিক সম্পদে পরিণত হয়।
কাতারে হামলার পর তিনি সরাসরি নেতানিয়াহুকে ফোনে সতর্ক করেন এবং আরব দেশগুলোর অবস্থানের সঙ্গে একাত্ম হন।
পরে নেতানিয়াহু কাতার সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চান এবং ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন।
চুক্তির মূল বিষয়
চুক্তি অনুযায়ী,
- ইসরায়েল গাজা থেকে আংশিক সেনা প্রত্যাহার করবে;
- ১,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে;
- হামাস জীবিত ও মৃত সকল জিম্মিকে ফেরত দেবে।
এ সমঝোতা কার্যকর হলে গাজায় যুদ্ধের অবসান ও পুনর্গঠনের পথ খুলে যেতে পারে।
বিগত ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে গাজায় ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
অস্বাভাবিক পথ, কিন্তু কার্যকর ফল
ট্রাম্পের কূটনীতি সব সময়ই প্রচলিত নিয়ম ভাঙা ধাঁচের। কখনো কঠোর হুমকি, কখনো ব্যক্তিগত আলাপের কৌশল—এই মিশ্র আচরণই হয়তো গাজা সংকটে কার্যকর হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তিনি এমন এক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে উদ্যোগ নিয়েছেন, যখন ইরান ও হিজবুল্লাহ দুর্বল এবং ইসরায়েল যুদ্ধক্লান্ত। ফলে আলোচনার পক্ষে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।
সমাপ্তি
এখনও অনেক অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে—বিশেষ করে হামাসের অস্ত্র সমর্পণ ও গাজার প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে। তবে ইতিহাস বলছে, এই চুক্তি কার্যকর হলে সেটিই হবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
আগামীকাল ঘোষিত হতে যাওয়া নোবেল শান্তি পুরস্কারে তার নাম না এলেও, এখন আর সেটিকে অচিন্তনীয় বলে মনে করছেন না কেউ।
সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ও বিবিসি বিশ্লেষণ | সম্পাদনা: প্রান্তকাল আন্তর্জাতিক ডেস্ক
এই বিভাগের আরও খবর
বাংলাদেশে কারো নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা নেই—স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাংলাদেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ যেকোনো ব্যক্তির…
কমান্ড পোস্টে গিয়ে পোকরোভস্ক দখলের খবর শোনেন পুতিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রবিবার দেশটির একটি সামরিক…
সারা দেশের আরও ৭৭ উপজেলায় নতুন ইউএনও নিয়োগ
অন্তর্বর্তী সরকার দেশের আরও ৭৭টি উপজেলায় নতুন উপজেলা…
খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনায় নরেন্দ্র মোদির বার্তা
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার…
জোটে গেলেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের রুল
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধভাবে অংশ…
সর্বশেষ খবর
2.
ট্রাইব্যুনালের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা জেড আই খান পান্নার
- ডিসেম্বর ৩, ২০২৫
3.
ইউরোপের সঙ্গে যুদ্ধ চাই না, তবে প্রয়োজন হলে প্রস্তুত: পুতিন
- ডিসেম্বর ৩, ২০২৫
জনপ্রিয় বিভাগ সমূহ
আরও পড়ুন
এলপিজির দাম বাড়বে নাকি কমবে—বিইআরসির সিদ্ধান্ত আজ
বেসরকারি খাতে ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির নতুন মূল্যহার আজ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) ঘোষণা করবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সৌদি আরামকোর…
আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রার্থিতা বাতিল হবে: নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী আচরণবিধি বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থান জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, কোনো…
বাউলশিল্পী আবুল সরকারের বিরুদ্ধে ঢাকায় আরেক মামলা, তদন্তের নির্দেশ
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও ধর্ম অবমাননার অভিযোগে আলোচিত বাউলশিল্পী আবুল সরকারের বিরুদ্ধে ঢাকায় আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছে। সোমবার ঢাকার…
লেখক শাহরিয়ার কবিরকে ১২ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ
মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় লেখক ও একাত্তরের ঘাতক–দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবিরকে আগামী ১২ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে…
খালেদা জিয়াকে ‘ভিভিআইপি’ ঘোষণা, নিরাপত্তায় নিয়োজিত হবে এসএসএফ
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (VVIP) ঘোষণা করেছে সরকার। একই সঙ্গে তাঁর নিরাপত্তায় বিশেষ…
সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদ ও তাঁর পরিবারের সাড়ে ৪ কোটি শেয়ার অবরুদ্ধ করলো সিআইডি
ঢাকা (১৯ নভেম্বর ২০২৫):সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তাঁর ভাই ইউসিবি ব্যাংক পিএলসি’র সাবেক পরিচালক আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি এবং রনির…
শেখ হাসিনার রায়কে ঘিরে দেশে কোনো অস্থিরতা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ঘিরে দেশে কোনো ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়নি…
রাতভর রাজধানী ও বিভিন্ন জেলায় ককটেল বিস্ফোরণ–বাসে অগ্নিসংযোগ
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আজ সোমবার রায় ঘোষণার আগের রাতে রাজধানী ঢাকা ও বিভিন্ন জেলায়…

