বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

দেশে ফেরার ঘোষণা, নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে তারেক রহমানের ২৩ বার্তা

দীর্ঘ ১৭ বছর নির্বাসিত জীবন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি দ্রুতই দেশে ফিরছেন। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি দেশের আগামী নির্বাচন, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা, জোট রাজনীতি, দলের প্রার্থী বাছাই এবং আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ২৩টি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেন।

তারেক রহমান বলেন, “জুলাই আন্দোলনের মূল নায়ক আমি নই, নায়ক বাংলাদেশের জনগণ।” তিনি দাবি করেন, এই আন্দোলনে ৬৩ জন শিশুসহ প্রায় দুই হাজার মানুষ শহীদ হয়েছেন, কিন্তু এর মাধ্যমে জয়ী হয়েছে গণতন্ত্রকামী জনগণ।

তিনি বলেন, নির্বাচন যত দ্রুত হবে, দেশে তত দ্রুত স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনে উদ্বেগ প্রকাশ না করে বলেন, প্রতিযোগিতা থাকলেই গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়। বিএনপি অতীতে ৬৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আন্দোলন করেছে, তাই আগামী নির্বাচনেও সবাইকে নিয়ে অংশগ্রহণ করবে বলে তিনি জানান।

তারেক রহমান স্পষ্ট করেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনি নিজেই অংশ নিচ্ছেন। প্রার্থী মনোনয়নে জনগণের আস্থা ও স্থানীয়ভাবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকবে মূল বিবেচনায়। একই সঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা দল সিদ্ধান্ত নেবে।

খালেদা জিয়ার বিষয়ে তিনি জানান, “আমাদের আপোষহীন নেত্রী সুস্থ অবস্থায় কারাগারে যান, কিন্তু বের হন অসুস্থ হয়ে। তার স্বাস্থ্যের ওপরই তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নির্ভর করছে।”

নিজের ওপর নির্যাতনের প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, “আমাকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, আমি আজও তা অনুভব করি। মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে আমাকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হয়েছে।”

তিনি জানান, রাজনীতি আর কখনও পারিবারিক আধিপত্যের ওপর নির্ভর করবে না, বরং যোগ্যতা ও জনগণের সমর্থনই হবে একমাত্র ভিত্তি। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন।

বিএনপির অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চাঁদাবাজি ও অসদাচরণের অভিযোগে সাত হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রার শুভ সূচনা, তবে জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে না।

জামায়াত ইস্যুতে তিনি মন্তব্য করেন, ১৯৭১ সালের ভূমিকার জবাব জামায়াতকেই দিতে হবে, বিএনপি নয়।

বিদেশে ১৭ বছর নির্বাসনে থাকার কষ্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “আমি ভাইকে রেখে এসেছিলাম, সুস্থ মাকে রেখে এসেছিলাম, ঘরবাড়ি রেখে এসেছিলাম—এখন আর কিছুই নেই।”

তিনি বলেন, “আমরা প্রতিশোধ চাই না। স্বৈরশাসনের সময় যারা নির্যাতন করেছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।” আওয়ামী লীগের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি যোগ করেন, দলটির সিদ্ধান্ত এখন আদালতের বিচারের বিষয়।

এই ২৩ বার্তার মাধ্যমে তারেক রহমান একদিকে দেশে ফেরার ইঙ্গিত দিলেন, অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে বিএনপির রাজনৈতিক রূপরেখা স্পষ্ট করলেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা; প্রান্তকাল বিশ্লেষণ ও সম্পাদিত সংস্করণ।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন