বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

সবার জন্য পরিবেশবান্ধব, দুর্যোগ-সহনশীল ও বিকেন্দ্রীকৃত আবাসন নিশ্চিত করতে হবে

– পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

ঢাকা, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫ খ্রি.

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সবার জন্য দুর্যোগ-সহনশীল, পরিবেশবান্ধব ও বিকেন্দ্রীকৃত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বসতি কোনো বিলাসিতা নয়—এটি একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। তিনি বলেন, “শুধু শহর নয়, গ্রামাঞ্চলেও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত ও আধুনিক আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। মাথা গোঁজার ঠাঁই যথেষ্ট নয়; বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও পরিবহন অবকাঠামো নিশ্চিত করেই প্রকৃত বসতি গড়ে তুলতে হবে।”

আজ রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে “পরিকল্পিত উন্নয়নের ধারা, নগর সমস্যায় সাড়া” প্রতিপাদ্যে বিশ্ব বসতি দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভূমি পানির নিচে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এখন থেকেই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা না নিলে বিপুলসংখ্যক মানুষের পুনর্বাসন ভবিষ্যতে ভয়াবহ সংকটে রূপ নেবে। তিনি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP) ও কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (CSR) মাধ্যমে নিম্নবিত্ত ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী আবাসন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, “মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রভাবে একপাক্ষিক নগরায়ণ এবং আবাসন ব্যবস্থায় অসমতা তৈরি হয়েছে। একজন বিত্তশালী যেখানে একাধিক ফ্ল্যাটের মালিক, একজন মধ্যবিত্ত নাগরিক একটি ফ্ল্যাট কেনার স্বপ্নই দেখতে পারেন না। তাই বসতি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব ও মানবাধিকারের অংশ হওয়া উচিত।”

পরিকল্পিত নগর গড়ার আহ্বান: জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন

আলোচনা সভায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, উপকূলীয় শহরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত তীব্র আকারে দেখা দিচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা কৃষি, জনজীবন ও নগর অবকাঠামোকে গভীর সংকটে ফেলছে। এর সমাধান হলো পরিকল্পিত ও টেকসই নগরায়ণ।

তিনি বলেন, “পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলতে ভূমির সঠিক ব্যবহার, গণপরিবহন উন্নয়ন, টেকসই অবকাঠামো, নিম্নআয়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী আবাসন এবং নগর সেবায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।”

গণপূর্ত উপদেষ্টা আরও বলেন, “পরিকল্পিত নগরায়ণ কেবল অবকাঠামোর উন্নয়ন নয়—এটি মানুষের জীবনমান উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। আমরা যদি সমন্বিতভাবে কাজ করি, তাহলে বাংলাদেশের নগরগুলোকে আধুনিক, টেকসই ও বসবাসযোগ্য নগরে রূপান্তরিত করা সম্ভব।”

বিশ্ব বসতি দিবস ২০২৫: আলোচনা, র‍্যালি ও মেলা

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (UNDP)-এর ডেপুটি আবাসিক সমন্বয়কারী সোনালী দয়ারত্নে।

এছাড়া সভায় বক্তব্য দেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল মতিন, রাজউকের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোসা. ফেরদৌসী বেগম, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মো. আসিফুর রহমান ভূঁইয়া।

অনুষ্ঠানে অতিথিরা ‘বিশ্ব বসতি দিবস ২০২৫’-এর স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং পরে তিন দিনব্যাপী বসতি মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। আলোচনা সভার আগে শেরেবাংলা নগর এলাকায় এক বর্ণাঢ্য র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন