শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির হোতা মোতাজ্জরুল ইসলাম মিঠু গ্রেপ্তার

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বহুল আলোচিত মোতাজ্জরুল ইসলাম মিঠু অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছেন। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে তাকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা গেছে, মিঠুর বিরুদ্ধে প্রায় ৭৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে দুদকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে আদালতে তোলা হলে তদন্ত কর্মকর্তা তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর রিমান্ড ও জামিন শুনানির তারিখ ধার্য করেন।

অবৈধ সম্পদের প্রমাণ

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মিঠু লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজ ও টেকনোক্র্যাট নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। কৃষিজমি, প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ি নির্মাণসহ স্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অন্যদিকে বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ার, গাড়ি, স্বর্ণালংকার, ব্যাংক হিসাব ও আসবাবপত্রসহ অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৫৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে মোট সম্পদ দাঁড়ায় প্রায় ৭৬ কোটি টাকা, যা বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।

স্বাস্থ্য খাতে অডিট না হওয়া দুর্নীতি

মিঠুর নাম স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির প্রতীক হিসেবে বহুল আলোচিত। বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের নামে তিনি বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, অতি কম মূল্যের যন্ত্রপাতি মেরামতের খরচ দেখানো হয়েছে কয়েকগুণ বেশি। যেমন, ৭ হাজার টাকার বেবি স্কেলার মেরামতের খরচ দেখানো হয় ৪ লাখ টাকার বেশি। একইভাবে ৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকায় কেনা কার্ডিয়াক মনিটরের মেরামতের খরচ দেখানো হয় প্রায় ৭ লাখ টাকা।

বিস্তৃত সিন্ডিকেট ও পারিবারিক জড়িততা

দুদকের তথ্য বলছে, মিঠুর নামে-বেনামে রয়েছে ৬১টি প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে তিনি সরকারি ক্রয় ও সরবরাহ খাত নিয়ন্ত্রণ করতেন। স্ত্রী, ভাই, ভাবি ও আত্মীয়-স্বজনদের নামেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে চক্রবদ্ধভাবে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন। শুধু মুগদা জেনারেল হাসপাতালের এক প্রকল্প থেকে তার স্ত্রী ফিউচার ট্রেড ৮৬ কোটি টাকার কার্যাদেশ পায়, যার বড় অংশ আত্মসাৎ করা হয়।

বিদেশে বিপুল সম্পদ

দেশীয় সম্পদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রেও মিঠুর বিপুল সম্পদ রয়েছে। নিউইয়র্ক, আটলান্টা, জ্যাকসন হাইটস, ম্যানহাটনসহ বিভিন্ন এলাকায় বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ও হোটেল ব্যবসায় তার কয়েক শ কোটি টাকার বিনিয়োগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি মার্কিন সরকার ফ্লোরিডা ও ক্যালিফোর্নিয়ায় তার সম্পত্তি জব্দ করেছে।

পটভূমি ও পরবর্তী প্রক্রিয়া

রংপুরের গঙ্গাচড়ার বাসিন্দা হলেও মিঠুর বর্তমান পরিচিতি রাজধানী ও চট্টগ্রামের একাধিক ঠিকানায় ছড়িয়ে আছে। তার বিরুদ্ধে দেড় হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের তথ্যও রয়েছে। দুর্নীতির অনুসন্ধান জোরদার হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই তিনি আলোচনায় ছিলেন।

গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং রিমান্ড শুনানির অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। দুদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, মিঠুর বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং চক্রের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন