রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

৫ আগস্ট ‘রাহুমুক্ত দিবস’ ঘোষণা, ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে তারেক রহমানের অঙ্গীকার

বিএনপি চেয়ারপারসন তারেক রহমান ৫ আগস্টকে ‘রাহুমুক্ত দিবস’ ও ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে বলেছেন, ২০২৪ সালের এই দিনে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হয় এবং গণতন্ত্রের পথে নতুন যাত্রা শুরু করে। তিনি বলেন, এই দিনটি এখন থেকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালন করা হবে এবং এটি গণতন্ত্র ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের প্রতীক হয়ে থাকবে।

জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া আজকের ভাষণে তিনি বলেন, একুশ শতকের বাংলাদেশে একটি পলাতক স্বৈরাচার গুম, খুন, অপহরণ, মামলা ও নির্যাতনের মাধ্যমে বিভীষিকাময় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দেড় দশকের আন্দোলনে দেশের লাখো মানুষ নির্যাতিত হয়েছে, ঘরবাড়ি হারিয়েছে। অনেকের পরিবার ভেঙে গেছে, বহু পরিবার আজো নিখোঁজ স্বজনের অপেক্ষায়।

তারেক রহমান অভিযোগ করেন, ফ্যাসিস্ট শাসনের সময় দেশে শত শত ‘আয়নাঘর’ নামে গোপন বন্দীখানা তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে বছরের পর বছর মানুষকে আটকে রাখা হতো। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমের নিখোঁজ থাকার বিষয়টি তিনি স্মরণ করেন এবং বলেন, এই অপরাধগুলোর কোনো বিচার হয়নি।

তিনি বলেন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর করে ফেলা হয়েছিল। শিক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের হাতে কলমের পরিবর্তে তুলে দেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিক সহিংসতার হাতিয়ার। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতি লুটপাট ও দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়।

তারেক রহমান দাবি করেন, দেশের জনগণ – ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক, হোটেলকর্মী, নারী, শিশু, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী – সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছিল। সেই আন্দোলনে দেড় হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং অন্তত ৩০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “১৯৭১ সাল ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ, আর ২০২৪ সাল ছিল স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ।” শহীদদের রক্তের ঋণ শোধে তিনি একটি ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন, যেখানে সকল নাগরিকের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত হবে।

তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্রে জনগণের প্রকৃত ক্ষমতা তখনই প্রতিষ্ঠা পাবে, যখন জনগণ সরাসরি নিজের ভোটে স্থানীয় সরকার থেকে সংসদ পর্যন্ত প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে পারবে। এজন্য সরকার ও শাসনব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ তৈরি করতে হবে এবং জনগণকে শক্তিশালী করতে হবে।

ভাষণের শেষাংশে তিনি আবারও সকলকে আহ্বান জানান আইন নিজের হাতে না তুলতে, মব সহিংসতা না করতে এবং নারী ও ভিন্নমতের মানুষের প্রতি সহনশীল আচরণ বজায় রাখতে। তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যা ‘মায়ের চোখে বাংলাদেশ’ – যেখানে প্রতিটি নাগরিক নিরাপদ থাকবে।”

তারেক রহমান বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের আদর্শ ও কর্মসূচি নিয়ে জনগণের আদালতে যাবে, আর জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কে ক্ষমতায় থাকবে। তবে এই ভিন্নমত যেন কখনও চরমপন্থা ও ফ্যাসিবাদের উত্থানের সুযোগ না দেয়, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

বক্তব্যের উপসংহারে তিনি বলেন, “আজ এবং আগামীর প্রতিটি ৫ আগস্ট হয়ে উঠুক গণতন্ত্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানবিক মানুষ হয়ে ওঠার অঙ্গীকারের দিন।” তিনি দেশের সব গণতন্ত্রকামী জনগণের সহায়তা কামনা করেন এবং বলেন, “বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জিন্দাবাদ।”


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন