রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

“এক ব্যক্তি তিন পদে থাকলে বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে না”—জাতীয় নাগরিক পার্টির আদিব

একই ব্যক্তি যখন দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তখন রাজনৈতিক কাঠামোতে ভারসাম্য থাকে না এবং বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে ওঠে না—এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব।

রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিকল্প নেতৃত্ব না গড়ে ওঠার অন্যতম প্রধান কারণ হলো—এক ব্যক্তি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেন। এর ফলে দলীয় চিন্তাধারা রাষ্ট্রের কাঠামোতে প্রভাব ফেলে এবং দলীয় আনুগত্য বিচার বিভাগসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ে।”

তিনি বলেন, “যখন একজনই প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা এবং দলের প্রধান হন, তখন দলের অন্য নেতাদের নেতৃত্বের সুযোগ দেওয়া হয় না। অনেক নেতাকর্মী এমপি হওয়ার স্বপ্নও দেখতে পারেন না—কারণ মনোনয়ন দেন সেই এক ব্যক্তি।”

তিন পদে তিন জনের প্রস্তাব

এ প্রেক্ষাপটে আদিব বলেন, “আমাদের প্রস্তাব, প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান এবং সংসদ নেতা—এই তিনটি পদে আলাদা ব্যক্তি থাকা উচিত। যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন, দলীয় প্রধানের দায়িত্ব তার ওপর থাকা ঠিক নয়।”

তিনি যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উদাহরণ টেনে বলেন, “সেখানে নিয়মিত প্রধানমন্ত্রী বদলায়, নতুন নেতৃত্ব উঠে আসে। কিন্তু আমাদের দেশে বলা হয় ‘শেখ হাসিনার বিকল্প নেই’, ‘তারেক রহমান ছাড়া চলবে না’—এই সংস্কৃতি ভাঙতে হবে।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামোতে সমন্বিত প্রস্তাব

আলোচনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো নিয়েও বিস্তারিত মত দেন আরিফুল ইসলাম আদিব। তিনি জানান, “দুই মাস আগেই আমরা শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি কাঠামো জমা দিয়েছিলাম। সেখানে বলা হয়েছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বাছাইয়ের জন্য ৫, ৭ বা ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন হবে। সরকারি দল, বিরোধী দল এবং সংসদে তৃতীয় অবস্থানে থাকা দল নাম প্রস্তাব করবে।”

তিনি বলেন, এই প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি, জামায়াত এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিও একমত হয়েছে এবং ঐকমত্য কমিশন চার দলের প্রস্তাবের ভিত্তিতে একটি সম্মিলিত খসড়া তৈরি করেছে।

বাছাই কমিটি ও ভোটিং প্রক্রিয়া

সমন্বিত খসড়া অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধি মিলে পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। সরকার ও বিরোধী দল তিনজন করে এবং তৃতীয় দল দুজনের নাম প্রস্তাব করবে। এই ৮ জনের মধ্য থেকে র‍্যাংকড চয়েস ভোটিংয়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্ধারণ করা হবে।

বিচার বিভাগীয় প্রভাব বিষয়ে সতর্কতা

আদিব বলেন, “আমরা বিচার বিভাগকে এই প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণ বাইরে রাখার পক্ষপাতী। অতীতে বিচার বিভাগ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়েছে—এই বাস্তবতায় বিচারকদের যুক্ত করা হলে নিরপেক্ষতা বিঘ্নিত হতে পারে।”

বিচারপতি নিয়োগে দলীয়করণের বিরোধিতা

বর্তমানে বিচারপতি নিয়োগে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের অগ্রাধিকার পাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগপন্থী ফ্যাসিস্ট আইনজীবীদের হাইকোর্টে নিয়োগ দেওয়া বন্ধ করা উচিত। আমরা চাই, ভবিষ্যতেও যেন কোনো সরকার দলীয়করণ অব্যাহত না রাখতে পারে।”

শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ

সবশেষে আদিব বলেন, “আমাদের প্রস্তাব শুধু বর্তমান সংকট সমাধানের পথই দেখায় না, এটি বিকল্প নেতৃত্ব তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করে গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার ভিত্তি গড়ে দেয়। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অনুরোধ করবো—তারা যেন ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।”


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন