রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

মিটফোর্ডে হত্যা: মূল তিন আসামিকে বাদ দেওয়া রহস্যজনক, অভিযোগ বিএনপির তিন সংগঠনের

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যার ঘটনায় মূল আসামিদের এখনও গ্রেপ্তার না করা এবং মামলার এজহার থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া ‘রহস্যজনক’ বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন—জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদল।

শনিবার (১৩ জুলাই) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ব্রিফিং রুমে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না।

তিনি বলেন, “যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত, সিসিটিভি ফুটেজে যাদের দেখা গেছে, আশ্চর্যজনকভাবে তাদের নাম এজহারে নেই। বরং নিরপরাধ তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। কেন এমন হলো, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।”

মোনায়েম মুন্না বলেন, “গণমাধ্যমের খবরে দেখা গেছে, মামলার বাদীর মেয়ে অভিযোগ করেছেন যে, পুলিশ মামলার এজহার থেকে মূল তিন খুনিকে বাদ দিয়ে অন্য তিনজনকে আসামি করেছে। অথচ হত্যার ভিডিও, সিসিটিভি ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা—সবই পুলিশের হাতে রয়েছে। তবু ৬০ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও মূল খুনিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। এটি বিরাট প্রশ্ন এবং রহস্য।”

তিনি আরও বলেন, “গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা জানতে চাই, কারা, কেন এই তিন আসামিকে বাদ দিয়ে নতুন করে অন্যদের আসামি করল? কেন ঘটনা দুই দিন পর প্রচারিত হলো, সেটিও খুঁজে দেখা দরকার।”

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা

মোনায়েম মুন্না জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পাঁচজনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। “সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা থেকে যা কিছু প্রয়োজন, আমরা সেটি করেছি। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং বিচার নিশ্চিতের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব শেখ হাসিনার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সেটিই হবে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংস্কার।”

আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে উদ্বেগ

মোনায়েম মুন্না বলেন, “বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ। খুলনায় যুবদলের এক বহিষ্কৃত নেতাকে গুলি করে ও রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। চাঁদপুরে এক ইমামের ওপর হামলা হয়েছে। কুমিল্লায় এক পরিবারের তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। ঢাবির হলে এবং প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রদলের নেতাদের হত্যার ঘটনা ঘটেছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, “প্রশাসনিক ব্যর্থতার সুযোগে একটি বিশেষ গোষ্ঠী দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় রাখছে, যাতে অস্থিরতার অজুহাতে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করা যায়। তারা চায়, আরও অরাজকতা তৈরি হোক।”

তিনি বলেন, “আমরা বারবার বলেছি, দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। কিন্তু সরকার তা করছে না।”

গুপ্ত সংগঠনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

মোনায়েম মুন্না আরও বলেন, “সম্প্রতি তরুণদের ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এ দেশের তরুণেরা বিএনপির ওপর আস্থা রাখছে। এরপরই একটি গুপ্ত সংগঠন এবং তাদের মদদপুষ্ট একটি আনাড়ি রাজনৈতিক দল নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।”

সতর্কতার আহ্বান

মোনায়েম মুন্না বলেন, “সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এখন কঠোর হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। জনগণকেও অনুরোধ করছি, কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তিকে সুযোগ দেওয়া যাবে না। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যেন কেউ দেশে অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে না পারে।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানি, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল করিম পল, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন