শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া ফোনালাপ নিয়ে তোলপাড়, তদন্তে নতুন মাত্রা

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে চলমান আন্তর্জাতিক তদন্ত নতুন মাত্রা পেয়েছে তার একটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপের সূত্র ধরে। গত মার্চে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এ অডিও রেকর্ডিংয়ে হাসিনাকে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিতে শোনা যায়।

বিবিসি আই এ রেকর্ডিংয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান জানিয়েছেন, এটি হাসিনার ভূমিকার “গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ” যা তাকে সরাসরি গণহত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে চিহ্নিত করছে।

অডিও বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট এবং বাংলাদেশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, এতে কোনো ধরনের সম্পাদনা বা কৃত্রিমতার প্রমাণ মেলেনি। প্রাথমিক বিশ্লেষণে ধারণা করা হচ্ছে, কোনো কক্ষে ফোনালাপ স্পিকারে চালিয়ে রেকর্ড করা হয়েছিল।

ফাঁস হওয়া ওই অডিওতে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “ঘটনাস্থলে যারা যাবে, lethal weapon (প্রাণঘাতী অস্ত্র) নিয়ে যাবে। যেখানেই পাবে, shoot (গুলি) করবে।”

ঘটনাটি ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই রাজধানীর গণভবনে ঘটে বলে নিশ্চিত করেছে বিবিসি। ওই সময়ে ঢাকাজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছিল এবং পুলিশ বাহিনীর গুলিতে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুর দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছিল।

আওয়ামী লীগের পাল্টা যুক্তি

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দাবি করেছে, ফোনালাপের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। দলটির এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, “এটি সত্য হলেও সেটি ছিল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের একটি বৈধ প্রচেষ্টা। নেতারা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো হত্যা নির্দেশ দেননি। সরকারি সিদ্ধান্তগুলো ছিল অনুপাতিক, সৎ এবং জানমালের ক্ষতি রোধে নেওয়া পদক্ষেপ।”

তবে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অডিও রেকর্ডিং হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান মামলায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার হতে পারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যেই রেকর্ডিংকে মামলার আলামত হিসেবে বিবেচনা করছে।

আইনগত প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যার নির্দেশ, বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং উসকানির অভিযোগে বিচার চলছে। বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের কাছে হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি। আন্তর্জাতিক আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান মনে করছেন, হাসিনার দেশে ফেরার সম্ভাবনা “খুবই কম।”

বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টের সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬০ জন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ মুখপাত্র বলেছেন, “দুঃখজনকভাবে কিছু সদস্য অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে জড়িয়ে পড়েছিল। নিরপেক্ষ তদন্ত চলছে।”

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে আছেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগ ওই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত।

জাতিসংঘের এক প্রাথমিক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের পেছনে রাজনৈতিক নির্দেশনার ভূমিকা ছিল। তবে আওয়ামী লীগ সেই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিবিসি সেনাবাহিনীর কাছে মন্তব্য চাইলেও কোনো সাড়া মেলেনি।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন