শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি ঝুঁকিতে, আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে ঢাকার শীর্ষ কর্মকর্তা দল

তিন মাসের আলোচনা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (৭ জুলাই) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই ঘোষণা দেন।

ট্রাম্প বলেন, “২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। এটি খাতভিত্তিক শুল্কের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগ হবে। উচ্চ শুল্ক এড়াতে যদি কোনো পণ্য ঘুরপথে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়, তাহলে সেই পণ্যের ওপরও উচ্চ শুল্কই আরোপ করা হবে।”

এর আগে ৩ এপ্রিল ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিলেন। তখন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর প্রস্তাবিত শুল্কের হার ছিল ৩৭ শতাংশ। তবে নতুন ঘোষণায় তা কিছুটা কমিয়ে ৩৫ শতাংশে নামানো হয়েছে। এ ঘোষণার আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য ছিল।

একাধিক দেশের ওপর শুল্ক

সোমবার ঘোষিত শুল্ক আরোপের তালিকায় বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, মিয়ানমার, লাওস, দক্ষিণ আফ্রিকা, মালয়েশিয়া, তিউনিসিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বসনিয়া, সার্বিয়া, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড এবং কাজাখস্তানের নাম রয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের ওপর নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্ক, মিয়ানমার ও লাওসের ওপর ৪০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ৩০ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, তিউনিসিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, বসনিয়ার ওপর ৩০ শতাংশ, সার্বিয়ার ওপর ৩৫ শতাংশ এবং কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে।

ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী, এসব শুল্ক আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এর আগে হোয়াইট হাউসের নির্ধারিত ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির সময়সীমা ৯ জুলাই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কার্যকর হওয়ার দিন পিছিয়ে ১ আগস্ট করা হয়েছে।

বাংলাদেশের ওপর চাপ ও ট্রাম্পের আহ্বান

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, “দয়া করে বুঝুন, ৩৫ শতাংশ শুল্ক আমাদের দেশের সঙ্গে আপনার দেশের যে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তা দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়—এই হার আসলে তার চেয়ে অনেক কম। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, যদি বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা গড়ে পণ্য উৎপাদন করে, তাহলে সেই পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক থাকবে না। বরং আমরা দ্রুত, পেশাদারভাবে এবং নিয়ম মেনে সব অনুমোদন দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব—অর্থাৎ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি কারখানাগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরের চাপ রয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের দৌড়ঝাঁপ

শুল্ক ইস্যুতে আলোচনা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বাণিজ্য উপদেষ্টা শুক্রবার সাংবাদিকদের জানান, “আগামী বুধবার ৯ জুলাই মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিতীয় দফায় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠক থেকে শুল্ক নিয়ে ভালো ফল পাওয়ার আশা করছি।”

বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানও এ বৈঠকে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেন বলে জানা গেছে।

রপ্তানি খাতে শঙ্কা

নতুন শুল্কের কারণে বাংলাদেশের পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতার চাপের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে ব্যবসায়ী মহল। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একক বাজার, যেখানে গত অর্থবছরে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুল্কের হার ৩৫ শতাংশে উঠে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যগুলোর দাম বেড়ে যাবে, যা ক্রেতাদের বিকল্প উৎসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা লাগতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই শুল্ক সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মহলে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেবে বাংলাদেশ, তা এখন দেখার বিষয়।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন