শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

বিএনপিকে ‘সংস্কার বিরোধী’ বলতে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে: মির্জা ফখরুল

বিএনপিকে ‘সংস্কার বিরোধী’ হিসেবে চিত্রিত করতে একটি মহল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রবিবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “মিডিয়ার কিছু অংশ ও কিছু ব্যক্তি বিএনপির সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালাচ্ছেন। বিএনপি সংস্কারের ব্যাপারে আন্তরিক। বেগম খালেদা জিয়া ২০১৬ সালে ভিশন-২০৩০ উপস্থাপন করেছিলেন। এরপর ২০২২ সালে ২৭ দফা এবং ২০২৩ সালে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছি। এ নিয়ে দেশে অসংখ্য প্রোগ্রাম হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “একটা মহল বিএনপিকে সংস্কার বিরোধী হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে। আমাদের আন্দোলন, সমাবেশ, লাঠিপেটা আপনারা দেখেছেন। বিএনপিকে নিয়ে এই প্রশ্নটা কেন উঠছে? এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

“বিএনপি বড় বড় সংস্কার করেছে”

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি বহু বড় সংস্কার করেছে। “মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসি, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সংসদীয় গণতন্ত্র, এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তিনটি নির্বাচন বিএনপি করেছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি, ভ্যাট প্রথা—সবই বিএনপির সময়ে এসেছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, “ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে কোনো লাভ হবে না। বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে চেনে, বিএনপির সাথেই থেকেছে।”

“নির্বাচন বিলম্বিত করা গণতান্ত্রিক শক্তির কাজ নয়”

নির্বাচন বিলম্বের ইস্যুতে মির্জা ফখরুল বলেন, “যারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়, তারা গণতন্ত্রের পক্ষে শক্তি নয়। বিএনপি জনগণের ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চায়, বিপ্লবের মাধ্যমে নয়।”

তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ নির্বাচন চায়। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আলোচনায় ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা হয়েছে। আমরা সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছি।”

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিএনপির অবস্থান

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার আলোচনা নিয়েও বক্তব্য দেন ফখরুল। তিনি জানান, বিএনপি বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাবের বেশিরভাগের সঙ্গেই একমত, তবে কিছু প্রস্তাব নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি বরাবরই সংস্কারপন্থী দল। “আমরাই প্রথম সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি। এখন বিএনপিকে ‘সংস্কার বিরোধী’ বলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

পিআর পদ্ধতি নিয়ে দ্বিধা

প্রেসিডেন্টিয়াল রিপাবলিক (পিআর) বা অনুপাতিক ভোট ব্যবস্থা নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে বলে জানান নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, “পিআর ব্যবস্থা নিয়ে যাঁরা বলছেন, তাঁরা কিভাবে এটি বাস্তবায়ন হবে, তা পরিষ্কার করছেন না। ইভিএমের মতো পিআরও একটি জটিল ব্যবস্থা। জনগণের মতামত ছাড়া এমন বড় পরিবর্তন সম্ভব নয়।”

তিনি বলেন, “ভোটাররা জানবে না, তাদের প্রতিনিধি কে হবে—এটাই পিআরের সমস্যা।”

জুলাই সনদ প্রসঙ্গে

মির্জা ফখরুল বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে বিএনপি বহু আগে মতামত দিয়েছে। সরকার বলেছিল তারা দায়িত্ব নেবে। এখন পর্যন্ত কিছু আনা হয়নি। বিএনপি সবসময় আলোচনায় প্রস্তুত।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, “জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) নামে আলাদা কোনো সংস্থা গঠনের বিষয়ে বিএনপি একমত নয়। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদকে দুর্বল করার মতো প্রস্তাবও বিএনপি সমর্থন করে না।”

তিনি আরও বলেন, “দীর্ঘ আলোচনা কাম্য নয়। আশা করি, গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ইস্যুগুলোতে ঐকমত্য হবে।”


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন