শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

গ্রাহকের ১১৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ধামাকা শপিং–এর এমডি চিন্তীসহ স্বার্থসংশ্লিষ্টদের ৬২ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক করেছে সিআইডি

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ‘ধামাকা শপিং’–এর বিরুদ্ধে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ৬২ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

ক্রোককৃত সম্পদের মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস. এম. ডি. জসীম উদ্দিন চিন্তীর নামে রাজধানীর বনানী মডেল টাউনের ৩ ও ২/এ নম্বর রোডে অবস্থিত ১৪ নম্বর প্লটে নির্মিত একটি বহুতল ভবন (৫ কাঠা জমি), যার বাজারমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এছাড়া, মাইক্রো ট্রেড ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড–এর নামে গাজীপুরের কাশিমপুর পূর্ব বাগাবাড়ী এলাকায় ৪১ শতাংশ জমি (সি.এস ও এস.এ ১৪৫ নং দাগ; আর.এস ৩৬৫ নং দাগ), যার আনুমানিক মূল্য ১২ কোটি টাকা, সেটিও ক্রোকের আওতায় আনা হয়েছে।

সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার জনাব আল মামুন–এর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৬ জুন ২০২৫ তারিখে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ, মহানগর দায়রা জজ আদালত এ সম্পদগুলোর ওপর ক্রোকাদেশ প্রদান করেন।

সিআইডির তদন্তে জানা যায়, ‘ধামাকা শপিং’ নামীয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি কোনও বৈধ নিবন্ধন ছাড়াই Invariant Telecom Bangladesh Ltd.–এর ছত্রছায়ায় পরিচালিত হচ্ছিল। প্রতিষ্ঠানটি বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে পণ্য সরবরাহের লোভ দেখিয়ে হাজার হাজার গ্রাহক ও সেলারদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। এসব পণ্যের বেশিরভাগই গ্রাহকের কাছে পৌঁছায়নি, বরং তা আত্মসাৎ করা হয়।

তদন্তে আরও দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কোনো ব্যাংক হিসাব না থাকলেও তারা Invariant Telecom-এর সাউথইস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের একাধিক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ব্যবসায়িক লেনদেন চালাতো। শুধুমাত্র সাউথইস্ট ব্যাংকের একটি হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেখানে ধামাকা শপিং–সংক্রান্ত লেনদেন হয়েছে ৫৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার, অথচ ২০২১ সালের ২৭ জুন ওই হিসাবটিতে ব্যালেন্স ছিল মাত্র ৯৩ হাজার ৭৩১ টাকা। এ তথ্য সুনির্দিষ্ট আর্থিক জালিয়াতির প্রমাণ বহন করে।

সিআইডি আরও জানিয়েছে, আত্মসাৎকৃত অর্থ ধামাকার এমডি চিন্তী ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। এমনকি Mico Trade Food and Beverage–এর হিসাবেও এই অর্থ অবৈধভাবে স্থানান্তর করা হয়, যা মানি লন্ডারিং অপরাধের মধ্যে পড়ে।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২–এর ৪(২)/৪(৪) ধারায় রাজধানীর বনানী মডেল থানায় ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর একটি মামলা (নং: ১৩) দায়ের করা হয়।

সিআইডির তদন্তে আরও উঠে এসেছে, সব আসামি বর্তমানে বিদেশে পলাতক এবং তারা আত্মসাৎকৃত অর্থের একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার করেছে। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের উৎস, গন্তব্য ও ব্যবহারের বিস্তারিত অনুসন্ধানে বিশেষ পুলিশ সুপার জনাব আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে একটি চৌকস তদন্ত দল কাজ করছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন