শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের ইরান আক্রমণ ঘিরে কূটনৈতিক ঝড় — জাতিসংঘে নিন্দা, ইউরোপ-এশিয়ায় উদ্বেগ

২৩ জুন ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ বিমান অভিযানে ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় বোমাবর্ষণের পর বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। ওয়াশিংটন ‘সম্পূর্ণ সফল’ অভিযান দাবি করলেও জাতিসংঘ থেকে উপসাগরীয় রাজতন্ত্র—একযোগে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানাচ্ছে।  

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ঘটনাটিকে “আঞ্চলিক শান্তি ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার সরাসরি হুমকি” বলে আখ্যা দিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে সব পক্ষকে অবিলম্বে কূটনৈতিক পথে ফিরতে অনুরোধ জানান। পরিষদের সেই বৈঠকেই রাশিয়া ও চীন ‘তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি’–সংবলিত খসড়া প্রস্তাব তুললেও মার্কিন ভেটোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে।  

চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং হামলাকে “আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন” আখ্যা দিয়ে বলেন, “বলপ্রয়োগ কখনও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে পারে না”। রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে অভিহিত করেন এবং সতর্ক করে দেন যে, “প্যান্ডোরার বাক্স খুলে গেছে”।  

ইরান-সংশ্লিষ্ট ইউরোপীয় ‘ই৩’—ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি—এক যৌথ ঘোষণায় বলেন, “পারমাণবিক বিস্তার রুখতে আলোচনায়ই সমাধান খুঁজতে হবে; সামরিক পদক্ষেপ নয়।” একইসঙ্গে তাঁরা তেহরানকে ‘আর কোনও উত্তেজক পদক্ষেপ’ না নেওয়ার সতর্কবার্তা দিয়েছেন।  

উপসাগরীয় সৌদি আরব, কুয়েত ও কাতার তাৎক্ষণিকভাবে রেডিয়েশন-পরীক্ষায় ‘ঝুঁকিহীন’ থাকার ঘোষণা দিলেও হামলার নিন্দা জানিয়ে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। কাতার ‘কূটনৈতিক সমাধানের জানালা এখনই খুলতে হবে’ বলে মন্তব্য করে।  

এশিয়ায় জাপান “গভীর উদ্বেগ” জানিয়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি রক্ষার পক্ষে অবস্থান জোরদার করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিস্থিতি ‘গুরুতর’ বললেও প্রকাশ্যে কোনও পক্ষ নেয়নি।  

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ হামলাকে “শান্তি নিশ্চিতে শক্তির যৌক্তিক প্রদর্শন” আখ্যা দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানান। তেহরান পাল্টা প্রতিশোধের ইঙ্গিত দিয়েছে; ইরানি পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালি বন্ধের প্রস্তাব পাস করায় জ্বালানি বাজারে উদ্বেগ বেড়েছে।  

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০১৫-এর পরমাণু সমঝোতা ভেঙে পড়ার পর এ হামলা ওয়াশিংটন-তেহরান সম্পর্ককে নতুন সংকটচূড়ায় পৌঁছে দিল। কূটনৈতিক চাপ সত্ত্বেও যদি প্রতিশোধ ও পাল্টা-প্রতিশোধের চক্র শুরু হয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নিরাপত্তা ও জ্বালানি সরবরাহ দুটিই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে—যার অভিঘাত বাংলাদেশসহ বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।    


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন