শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রে ছয়টি গভীর গর্ত

২২ জুন, তেহরান:

যুক্তরাষ্ট্রের ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’-এ ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর নতুন স্যাটেলাইট চিত্রে সেখানে ছয়টি গভীর গর্ত ও বিস্ফোরণে সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষের ছড়াছড়ি দেখা গেছে। পর্বতঘেরা এই কেন্দ্রটি ইরানের অন্যতম উচ্চ-নিরাপত্তাসম্পন্ন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা হিসেবে পরিচিত।

প্রাথমিকভাবে প্রকাশিত স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ফোর্দো স্থাপনাটির পাহাড়ি ঢালে ছয়টি স্পষ্ট মাটির গর্ত তৈরি হয়েছে, যেগুলোর প্রতিটি প্রায় ১০–১৫ মিটার ব্যাসের। বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলো মার্কিন ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনেট্রেটর’ (MOP) বোমার প্রবেশপথ হতে পারে—যা স্থাপনাটির নিচে থাকা গোপন কক্ষে বিস্ফোরিত হয়েছে।

‘ব্লাস্ট নয়, ভিতরে বিস্ফোরণ’

ব্রিটিশ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ম্যাকেঞ্জি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসেস-এর সিনিয়র ইমেজ বিশ্লেষক স্টু রে বলেন, “ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনেট্রেটর সরাসরি প্রবেশ করে গভীর গোপন কক্ষে বিস্ফোরণ ঘটায়। তাই ভূমিতে বড় ধরনের বিস্ফোরণ দাগ না দেখা গেলেও অভ্যন্তরে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “চিত্রে যেভাবে ধ灰 ধূলিকণা এবং কংক্রিটের টুকরো ঢাল বেয়ে নেমে গেছে, তাতে বোঝা যায় বিস্ফোরণ অভ্যন্তরেই হয়েছে এবং ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

ইরানের পক্ষ থেকে পাল্টা দাবি

ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লঙ্ঘন। তবে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং গবেষণাগার সরঞ্জাম আগে থেকেই অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।”

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক উপস্থাপনায় পররাষ্ট্র বিশ্লেষক হাসান আবেদিনি বলেন, “ফোর্দোতে কোনও তাৎক্ষণিক অপারেশন চলছিল না, আর এসব সাইটের কার্যক্রম ইতোমধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এতে আমাদের ক্ষতি সীমিত।”

টার্গেট ছিল গোপন ইউরেনিয়াম চেম্বার?

বিশ্লেষকদের মতে, ফোর্দো স্থাপনাটি পাহাড়ের নিচে নির্মিত এবং চ্যানেল টানেলের চেয়েও গভীরে অবস্থিত। এই কারণে সাধারণ বোমায় এটি ধ্বংস করা সম্ভব নয়। ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের GBU-57 বাংকার বাস্টার বা MOP ব্যবহারই ছিল এই ধরনের গভীর ভূগর্ভস্থ কেন্দ্র ধ্বংসের একমাত্র উপায়।

স্যাটেলাইট চিত্রে কোনো টানেল মুখ লক্ষ্য করা যায়নি। এই বিষয়ে স্টু রে বলেন, “টানেলমুখগুলো হয় হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করা হয়নি, নয়তো ইরান আগে থেকেই সেগুলো কংক্রিট দিয়ে বন্ধ করে রেখেছিল যাতে লক্ষ্যবস্তু না হয়।”

ভবিষ্যত প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা

বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। যদিও আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা (IAEA) নিশ্চিত করেছে—হামলার ফলে কোনো পারমাণবিক বিকিরণ ঘটেনি, তবে কৌশলগতভাবে এটি ইরানের পরমাণু সক্ষমতার ওপর একটি বড় ধাক্কা।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র বলছে—এটি ছিল ‘সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে সামরিক অভিযান’, যার উদ্দেশ্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতাকে নিরস্ত করা, কোনোভাবেই সাধারণ নাগরিক বা বাহিনীর ওপর হামলা নয়।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন