শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের রহস্য উদঘাটন, খুনের দায় স্বীকার করলেন জনির বাবা-মা

নারায়ণগঞ্জে পারিবারিক সহিংসতায় নির্মম হত্যা, ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয় লাশ

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানাধীন পূর্ব শিয়াচর লালখা এলাকায় ড্রেন থেকে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ভয়াবহ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে নিহত যুবক জনি সরকারের নিজ বাবা-মাকে। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন তারা।

গত ১৭ জুন (মঙ্গলবার) সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে স্থানীয় বাসিন্দারা এডভান্স গার্মেন্টস এর পাশের ড্রেনে একটি বস্তা ভেসে থাকতে দেখে কৌতূহলবশত খুলে ফেলেন। বস্তার ভিতরে একটি মরদেহ দেখতে পেয়ে তারা স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রঞ্জু মিয়াকে খবর দেন। তিনি ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ফতুল্লা মডেল থানাকে অবহিত করেন।

পরে ফতুল্লা থানার অপারেশনস অফিসার পরিদর্শক (নিঃ) মো. আনোয়ার হোসেন ও এসআই মো. মালমগীর হোসেন ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করেন। স্থানীয়দের সহায়তায় পরিচয় নিশ্চিত হয়—মৃত ব্যক্তি জনি সরকার (২৫), পিতা করুনা সরকার, মাতা মিতা সরকার। তিনি ওই এলাকায় দুলাল মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন।

ঘটনার পর নিহত জনির বাবা থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জনাব প্রত্যুষ কুমার মজুমদারের নির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও ফতুল্লা থানা যৌথভাবে তদন্তে নামে।

সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ, পারিপার্শ্বিক তথ্য বিশ্লেষণ এবং জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশের সন্দেহ গিয়ে পড়ে নিহত জনির বাবা-মায়ের ওপর। তদন্তে হত্যাকাণ্ডে তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিললে দু’জনকেই আটক করে থানায় আনা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেন, জনি সরকার ছিলেন মাদকাসক্ত ও বখাটে স্বভাবের। নিয়মিতভাবে বাবা-মাকে টাকার জন্য মারধর করতেন। ঘটনার আগের রাতেও তিনি তাদের ওপর হামলা চালান। অতিষ্ঠ হয়ে ছেলে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

১৬ জুন রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে, জনির বাবা করুনা সরকার প্রথমে রুটি বানানোর বেলন দিয়ে মাথায় ও মুখে আঘাত করেন। অচেতন হলে, বাবা-মা মিলে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা নিশ্চিত করেন। এরপর রাত ২টার দিকে লাশ বস্তাবন্দি করে ড্রেনে ফেলে আসেন জনির বাবা নিজেই।

গ্রেফতারকৃত পিতা-মাতা আদালতে হাজির হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। পুলিশ জানিয়েছে, এটি একটি ক্লাসিক পারিবারিক সহিংসতার উদাহরণ, যেখানে দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ থেকে ঘটে গেছে চরম একটি অপরাধ।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন