শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ড. ইউনূসের উদ্বেগ: শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন ইস্যুতে মোদির নির্লিপ্ততা, ভারতের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অভিযোগ করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ঢাকার অনুরোধে কোনো সহায়তা করেননি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে এবং তাকে ‘চুপ থাকতে’ না বলে ভারত একধরনের ‘দায় এড়ানোর কৌশল’ গ্রহণ করেছে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

বুধবার (১১ জুন) লন্ডনের বিখ্যাত নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউস-এ আয়োজিত সংলাপে প্রধান বক্তা হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

“তার কথাবার্তায় জনগণ ক্ষুব্ধ হয়, তাকে চুপ থাকতে বলুন”

চ্যাথাম হাউসে দেওয়া বক্তব্যে ড. ইউনূস জানান, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতে তিনি শেখ হাসিনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমি তাকে (মোদি) বলি—আপনার তাকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে আমি জোর করতে পারি না, কিন্তু অনুরোধ করতে পারি তাকে চুপ থাকতে বলার জন্য। তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যগুলো বাংলাদেশের জনগণকে ক্ষুব্ধ করছে।”

এর জবাবে মোদির মন্তব্য ছিল, “এটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, আমরা এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।” এই জবাবে হতাশা প্রকাশ করে ড. ইউনূস বলেন, “এটা ছিল বিস্ফোরক পরিস্থিতি, যা সোশ্যাল মিডিয়ার ঘাড়ে চাপিয়ে উপেক্ষা করা যায় না।”

“আইনানুগ প্রক্রিয়ায় ফেরত আনা হবে, প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে”

প্রধান উপদেষ্টা জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সাধারণ জনগণ ও ছাত্রদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তাকে তলব করা হয়েছে। তিনি বলেন, “যদি তিনি সাড়া না দেন, তবে প্রয়োজনে আমরা ইন্টারপোলের সহায়তা নেব। সবকিছুই আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হবে।”

ভারতীয় গণমাধ্যমে ভুয়া সংবাদের অভিযোগ

ড. ইউনূস তার বক্তব্যে ভারতীয় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও উদ্বেগ জানান। তিনি বলেন, “আমরা ভারতের সঙ্গে দৃঢ় ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই, কিন্তু ভারতীয় মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যেসব ভুয়া সংবাদ ছাপা হচ্ছে, তা সেই সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা উদ্বিগ্ন যে এসব খবর ভারতের কোনো রাজনৈতিক মহলের নির্দেশেই প্রচারিত হচ্ছে। বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে বারবার অস্বস্তিতে ফেলছে।”

প্রেক্ষাপট

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পড়ে গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ত্যাগ করে গোপনে ভারতে চলে যান। বর্তমানে তিনি নয়াদিল্লির একটি সেফ হাউজে অবস্থান করছেন বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

ড. ইউনূসের বক্তব্য অনুযায়ী, ভারতের সহায়তা ছাড়া এই প্রক্রিয়া পূর্ণতা পাবে না। তবে ভারত এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। ব্রিটিশ এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে এই প্রসঙ্গে মোদির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বলেও সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র: চ্যাথাম হাউস বক্তৃতা, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ফার্স্টপোস্ট


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন