শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

কাশ্মীর ইস্যুতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দিল ভারত

কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে মধ্যস্থতার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এমন পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে পাকিস্তান, তবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। বিষয়টি ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস মঙ্গলবার (১০ জুন) এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, “বিশ্বব্যাপী দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের সমাধানে ডোনাল্ড ট্রাম্প সবসময় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। কাশ্মীর ইস্যুতেও তিনি বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন।”

ব্রুসের বক্তব্যের সূত্র ধরে জিও নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টাগুলো ইতিবাচক ফল দিচ্ছে বলে মনে করছে ইসলামাবাদ। মার্কিন প্রশাসনও আশা করছে, ট্রাম্প তাঁর কার্যকালে কাশ্মীর ইস্যুর মতো দীর্ঘমেয়াদি বিরোধে সমাধানে সহায়তা করতে পারেন।

এই প্রেক্ষাপটে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন ওঠে পাকিস্তানের পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বে ৯ সদস্যের সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি ফর পলিটিকাল অ্যাফেয়ার্স অ্যালিসন হুকারের সাম্প্রতিক বৈঠক নিয়ে। জানতে চাওয়া হয়—যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতকে আলোচনার টেবিলে আনতে তার কূটনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করতে সম্মত হয়েছে?

জবাবে মুখপাত্র ব্রুস বলেন, “আমাদের কূটনীতিকরা পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতে যুদ্ধবিরতি ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিষয়েও মতবিনিময় হয়েছে।” তিনি আরও জানান, ডেপুটি সেক্রেটারি ল্যান্ডাউ একই সময় ভারতের প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন এবং সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ভারতের পাশে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

কাশ্মীর ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে বলেন, “আমি আপনাদের সঙ্গে কাজ করব, যাতে কাশ্মীর নিয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়।” ট্রাম্পের এমন অভিব্যক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্তান। তবে ভারত ঐতিহ্যগত অবস্থান বজায় রেখে স্পষ্ট জানিয়েছে—কাশ্মীর একটি দ্বিপক্ষীয় বিষয়, এবং এতে তৃতীয় পক্ষের কোনো মধ্যস্থতার সুযোগ নেই।

পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ব্রুস ট্রাম্পের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে না পারলেও বলেন, “তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি অসম্ভবকে সম্ভব করে আলোচনার টেবিলে অনেককেই এনেছেন। এটা অবাক করার মতো কিছু নয় যে তিনি কাশ্মীর নিয়েও কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন।”

উল্লেখ্য, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী একটি নিরপেক্ষ স্থানে সব বিরোধমান বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। তবে সে উদ্যোগ দৃশ্যমান অগ্রগতি পায়নি এবং উভয় পক্ষই পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে মুখ বন্ধ রেখেছে।

ট্যামি ব্রুস আরও বলেন, “যদিও আমি ট্রাম্পের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা জানি না, তবে তিনি এমন একজন নেতা যাঁর লক্ষ্যই হচ্ছে বিশ্বব্যাপী স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা। এটি একটি উত্তেজনাপূর্ণ সময়, প্রতিদিন নতুন কিছু ঘটছে, আর আমরা আশাবাদী—কাশ্মীর নিয়েও কিছু অগ্রগতি হবে।”

বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে কাশ্মীর ইস্যুতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতা প্রস্তাব দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। তবে তা কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে ভারত ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপের ভারসাম্যের ওপর।


তথ্যসূত্র: জিও নিউজ, বিবিসি, এপি, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন