শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

উত্তর গাজার সব বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল, নিহত ছাড়াল ৫৫ হাজার

১০ জুন ২০২৫

উত্তর গাজায় সামরিক অভিযান আরও জোরদার করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ড্রোন ও যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে সীমান্তবর্তী অঞ্চল—বেইত লাহিয়া, জাবালিয়া ও বেইত হনুনের সব আবাসিক ভবন গুঁড়িয়ে দিচ্ছে তারা। গাজা সিটির আশপাশের এলাকাগুলোতেও হামলার তীব্রতা বেড়েছে। ইউরোপীয় হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোয় চলছে ঘনঘন স্থল অভিযান।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার দিনভর ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ৬০ জন এবং আহত হয়েছে আরও ৩৮৮ জন। এ নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধকালে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৯২৭ জনে। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ২৬ হাজার ২২৭ জন ফিলিস্তিনি।

নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৪ জন দক্ষিণ রাফাহতে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) একটি ত্রাণকেন্দ্রের কাছে প্রাণ হারান। একই দিন গাজার মধ্যাঞ্চলে জিএইচএফের অপর একটি ত্রাণকেন্দ্রে সহায়তা নিতে আসা মানুষের ওপর ফের গুলি চালায় ইসরায়েলি বাহিনী, এতে মারা যান আরও দুজন এবং আহত হন ৯২ জন। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই দক্ষিণ রাফাহতে জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে হামলায় প্রাণ হারান ১৪ জন।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের সীমানায় প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায়, যাতে অন্তত ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেই ঘটনার পরপরই গাজা উপত্যকায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। প্রায় ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের মধ্যস্থতায় গত ১৯ জানুয়ারি একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তবে মাত্র দুই মাস পর, গত ১৮ মার্চ থেকে আবারও পূর্ণমাত্রায় অভিযান শুরু করে তারা।

দ্বিতীয় দফার এই অভিযানে ইতোমধ্যেই গাজায় ৪,৬৪৯ জন নিহত এবং প্রায় ১৪,৫৭৪ জন আহত হয়েছে। যুদ্ধের শুরুতে জিম্মি হওয়া ২৫১ জনের মধ্যে প্রায় ৩৫ জন এখনো জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, সামরিক অভিযান চালিয়েই তাদের উদ্ধার করার পরিকল্পনা রয়েছে।

জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। ইতোমধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল না করা এবং সব জিম্মিকে মুক্ত না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।

এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় বিষয়ক আলোচনায় ইরান অংশ নিয়েছে বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “গাজা বিষয়ে এখন বিশাল সমঝোতার একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে আলোচনার টেবিল। আর ইরান এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। আমরা কোনো আপস চাই না, জিম্মিদের মুক্তিই আমাদের মূল লক্ষ্য।” যদিও ইরানের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি ট্রাম্প, এবং এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে হোয়াইট হাউজ কিংবা জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

গাজা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। রাফাহ সীমান্তের মানবিক পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। খাদ্য, চিকিৎসা ও বিশুদ্ধ পানির সংকট চরমে পৌঁছেছে। মানবিক ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় যদি যুদ্ধ তৎক্ষণাৎ বন্ধ না হয়, তাহলে সেখানে মানবসভ্যতার ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ দুর্যোগ নামতে পারে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন