শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

ফ্লাইট থেকে হুইলচেয়ারে নামানো হয়, প্রটোকল নেননি

থাইল্যান্ডে দীর্ঘ এক মাসের চিকিৎসা শেষে রোববার (৮ জুন) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে দেশে ফিরেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইট নম্বর TG339-এ তিনি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন রাগিব সামাদ জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতি সাধারণ যাত্রীর মতোই দেশে ফেরেন এবং কোনো রাষ্ট্রীয় প্রটোকল গ্রহণ করেননি। রাত পৌনে তিনটার দিকে তিনি বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।

ফ্লাইট থেকে তাকে হুইলচেয়ারে করে নামানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে তাকে শারীরিকভাবে ক্লান্ত এবং বিধ্বস্ত মনে হচ্ছিল। মুখে মাস্ক ও পরনে ছিল সাদা শার্ট ও সাধারণ লুঙ্গি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদ ও শ্যালক ডা. নওশাদ খান।

গত ৮ মে দিবাগত রাতে একই এয়ারলাইনের TG340 ফ্লাইটে করে তিনি ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। তাঁর দেশত্যাগের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় নানা গুঞ্জন ও বিশ্লেষণ। ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও তিনি দেশে অবস্থান করেছিলেন। প্রায় ৯ মাস পর বিদেশ যান তিনি।

মামলার পটভূমি: আলোচনায় আবারও পুরোনো ইস্যু

আবদুল হামিদের বিদেশযাত্রা ও দেশে প্রত্যাবর্তনের পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে তার বিরুদ্ধে থাকা একটি হত্যা মামলা। গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় দায়ের হওয়া এই মামলায় শুধু আবদুল হামিদই নন, আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নামও আসামি তালিকায় রয়েছে।

মামলার বাদীপক্ষের দাবি, ২০২৩ সালের আগস্টে আন্দোলন দমনে সরকারি নির্দেশে সংঘটিত এক সহিংসতায় নিরীহ নাগরিক নিহত হন এবং রাষ্ট্রীয় পদে থেকে সেটিকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন আবদুল হামিদ। যদিও মামলাটি তদন্তাধীন এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় এখনও অগ্রগতি হয়নি, তবে একটি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—সাবেক রাষ্ট্রপতির ভূমিকা কতটুকু আইনগতভাবে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব?

রাজনৈতিক বিশ্লেষণ: অবস্থান কি পরিবর্তন হতে যাচ্ছে?

আবদুল হামিদ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠিত নেতা হলেও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকালে কখনও কখনও নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে দলীয় সরকারের সময় তাঁর বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে সংশয়ও ছিল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতার পালাবদলের পর যেসব গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিত্ব এখনো দেশে আছেন বা ফিরেছেন, তাঁদের রাজনৈতিক ভূমিকা এবং দায়বদ্ধতা নতুন প্রেক্ষাপটে বিচার্য হয়ে উঠছে।

তাঁর বিরুদ্ধে থাকা মামলা কেবল আইনি বিষয় নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতার প্রশ্নও সামনে এনে দিয়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রপতির এই প্রত্যাবর্তন নানান দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রটোকলবিহীন আগমন, শারীরিক অবস্থা, এবং পুরোনো মামলা—সব মিলিয়ে এটি কেবল একটি ব্যক্তির দেশে ফেরার খবর নয়, বরং একটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় সাবেক রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের অবস্থান কীভাবে মূল্যায়িত হবে, তারই প্রতিচ্ছবি।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন