শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

গাজায় মানবিক বিপর্যয়: আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরায়েল ঘিরে নীতিগত দ্বিধায় পশ্চিমা রাষ্ট্রসমূহ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | জুন ৮, ২০২৫:

গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের বিপরীতে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংগঠন, আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থা এবং কূটনৈতিক মহলে গুরুতর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। সংঘর্ষের পরিণতিতে বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারানোর পাশাপাশি শিশু, নারী ও অসহায় জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে চালানো সামরিক কর্মকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের শামিল হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

যুদ্ধের নিয়মের বাইরে?

গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে নারী ও শিশুসহ হাজার হাজার সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। স্বাধীন মানবাধিকার বিশ্লেষক ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের আওতায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রতিটি পক্ষের দায়িত্ব। অথচ, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে চিকিৎসা, খাদ্য ও মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে পারছে না — যা যুদ্ধাপরাধের আওতায় পড়তে পারে।

গাজায় ইসরাইলের গনহত্যা

আইন ও মানবতা—দুটোই প্রশ্নবিদ্ধ

জেনেভা কনভেনশনের রক্ষক সংস্থা হিসেবে পরিচিত আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির একাধিক পর্যবেক্ষক সরেজমিনে গাজা পরিদর্শনের পর জানিয়েছেন, পরিস্থিতি ‘নরককেও ছাড়িয়ে গেছে’। সংস্থার প্রেসিডেন্ট উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “মানবতার মূল নীতিগুলো ক্ষয়ে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও মানবিক সহযোগিতার কাঠামোকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।”

গণহত্যার অভিযোগ—আইনগত বিতর্ক

দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান অভিযান ও গণধ্বংসের উদ্দেশ্যমূলক কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনে গণহত্যা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে ইসরায়েল বরাবরই এসব অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত’ ও ‘ইহুদিবিদ্বেষী প্ররোচনার অংশ’ বলে দাবি করছে।

পশ্চিমা অবস্থানে বিভাজন

ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক রাষ্ট্র যেমন ফ্রান্স, কানাডা ও যুক্তরাজ্য এখন গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি তুলছে। তারা বলছে, ইসরায়েল তার আত্মরক্ষার অধিকার থাকলেও, এই মুহূর্তে যে মাত্রার সামরিক আগ্রাসন চালানো হচ্ছে, তা একেবারেই অপ্রতিরোধ্য ও অনুপাতহীন। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো ইসরায়েলের পাশে থাকলেও জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ভেটো করায় তাদের অবস্থান সমালোচনার মুখে পড়েছে।

নেতানিয়াহুর ভূমিকা—রাজনৈতিক স্বার্থ না নিরাপত্তা?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে রাজনৈতিকভাবে নিজের অবস্থান সুরক্ষার চেষ্টা করছেন। নিজ দলের দুর্নীতির মামলায় আইনি চাপ এবং অভ্যন্তরীণ জবাবদিহি এড়ানোর প্রয়োজনে তিনি একরকম কৌশলগত যুদ্ধে লিপ্ত আছেন।

মানবিক ও আইনি দায়—কেবল ইসরায়েল নয়, বিশ্বও জবাবদিহির মুখে

যুদ্ধ শেষ হলেও তার রেশ থাকবে দীর্ঘদিন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচার, মানবাধিকার লঙ্ঘনের নথিভুক্ত দলিল, এবং যুদ্ধ-পরবর্তী অনুসন্ধানসমূহ নিশ্চিত করবে যে, শুধু ইসরায়েল নয় — যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের পক্ষে নীরব থেকেছে বা সমর্থন করেছে, তারাও ইতিহাসে বিবেচিত হবে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন