শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

সব দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক দলই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়: ১২ দলীয় জোট

ঢাকা, ৩০ মে ২০২৫:

১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, কেবল একটি দল নয়—বাংলাদেশের সকল দেশপ্রেমিক, গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলই চায় ডিসেম্বরের মধ্যেই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন হোক। দেশের মুক্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির জন্য এই নির্বাচন জরুরি বলে তারা মনে করেন।

শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের টোকিওতে দেওয়া বক্তব্য—“ডিসেম্বরে মাত্র একটি দল নির্বাচন চায়”—সম্পূর্ণ অসত্য, বিভ্রান্তিকর এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা একে ‘নিরেট মিথ্যাচার’ বলে অভিহিত করেছেন।

১২ দলীয় জোটের নেতারা বলেন, “ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি কেবল একটি দলের নয়, গত ৯ মাস ধরে আমরা সহ একাধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং সাধারণ জনগণ এ বিষয়ে একমত। প্রধান উপদেষ্টা হয়তো ভুলে যাচ্ছেন, কথার মারপ্যাঁচে ক্ষমতা রক্ষা করা যাবে না। পদত্যাগের নাটক করেও জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।”

তারা আরও বলেন, “ড. ইউনূস কিছু জনবিচ্ছিন্ন, জনসমর্থনহীন ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দলের সাথে বৈঠক করে প্রকৃত গণতন্ত্রপন্থী শক্তিগুলোকে অবজ্ঞা করেছেন। এ আচরণ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জড়িত দল ও নেতৃবৃন্দকে ব্যথিত করেছে।”

জোটের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, “দেশের মানুষ ১৯৭১ সালে, ১৯৯০ সালে ও সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন করেছে, তার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ভোট ও গণতন্ত্র। সেই জনগণের স্বপ্নে জল ঢালা হবে যদি নির্বাচন বিলম্বিত করা হয়।”

নেতারা বলেন, “দেশের সেনাবাহিনী থেকেও বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক বার্তা এসেছে। জনগণের চাওয়া ও বাস্তবতার নিরিখে আমরা চাই, অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দেওয়া হয়েছে নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব, কোনো স্থায়ী রাজনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব নয়। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া হতে পারে, তবে তার পূর্বশর্ত হলো—নির্বাচনের তারিখ ও রূপরেখা ঘোষণা।”

তারা বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে থাকা কিছু উপদেষ্টা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান। ড. ইউনূসের এই রাজনৈতিক কৌশল ব্যর্থ হবে। জনগণ জানে, প্রকৃত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ছাড়া দেশ বাঁচবে না।”

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে ১২ দলীয় জোট নেতারা বলেন, “আপনি যে পথে হাঁটছেন, তার শেষ যেন আফগানিস্তানের আশরাফ গনির মতো না হয়। যদি আপনি জনগণের আকাঙ্ক্ষা মেনে চলতে ব্যর্থ হন, তবে ভবিষ্যতের দায়ও আপনাকেই নিতে হবে।”

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী নেতৃবৃন্দ:

১. মোস্তফা জামাল হায়দার – চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টি (জেপি)

২. শাহাদাত হোসেন সেলিম – চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ এলডিপি

৩. সৈয়দ এহসানুল হুদা – চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয় দল

৪. ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম – মহাসচিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম

৫. রাশেদ প্রধান – সহ-সভাপতি, জাগপা

৬. লায়ন ফারুক রহমান – চেয়ারম্যান, লেবার পার্টি

৭. শামসুদ্দীন পারভেজ – চেয়ারম্যান, কল্যাণ পার্টি

৮. মাওলানা আব্দুর রকিব – চেয়ারম্যান, ইসলামী ঐক্যজোট

৯. আবুল কাশেম – মহাসচিব, ইসলামিক পার্টি

১০. এম.এ. মান্নান – সভাপতি, নয়া গণতান্ত্রিক পার্টি

১১. ফিরোজ মো. লিটন – চেয়ারম্যান, পিএনপি

১২. অন্যান্য শরিক দলের নেতৃবৃন্দ

নেতারা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া ক্ষমতা ধরে রাখার প্রয়াস ইতিহাসে কখনও সফল হয়নি, এবারও হবে না। ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনই এখন একমাত্র গ্রহণযোগ্য পথ।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন