শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

নতুন বাংলাদেশ গঠনে জাপানের সহযোগিতা চাইলেন ড. ইউনূস: টোকিওতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে তিনি “নতুন বাংলাদেশ” গঠনের প্রয়াসে জাপানের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন।

শুক্রবার টোকিওতে জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) ও জাইকা যৌথভাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার’-এ ড. ইউনূস বলেন, “বড় বিপদের মধ্যে আছি আমরা। আক্ষরিক অর্থে, গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশ একটি ভূমিকম্প পার করেছে। এখন সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে সবকিছু গুছিয়ে তোলার চেষ্টা করছি।”

জাপানকে ‘সত্যিকারের বন্ধু’ আখ্যা

বাংলাদেশের এই রূপান্তর প্রক্রিয়ায় জাপানকে বন্ধু হিসেবে পাশে পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে ড. ইউনূস বলেন, “অসম্ভবকে সম্ভব করা আমাদের কাজ এবং জাপান সেই বন্ধু যে কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়ায়।”

তিনি বলেন, “নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা একটি ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জ। আমরা ইতিহাসকে দেখাতে চাই যে, এই পরিবর্তন সম্ভব, তাও নিখুঁতভাবে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই তা সম্ভব।”

ড. ইউনূস আরও বলেন, “আমরা একটি নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করেছি। এখন সময় এসেছে এটিকে বাস্তবায়নে রূপ দেওয়ার। জাপানের সহযোগিতায় আমরা সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।”

মাতারবাড়ি উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক সম্ভাবনা

মাতারবাড়ি উন্নয়নে সহায়তার জন্য জাপানকে ধন্যবাদ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “এটি কেবল একটি প্রকল্প নয়, বরং এটি একটি দেশের অর্থনীতির ভিত্তি গড়ে দিয়েছে এবং মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার শক্তি ধারণ করে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দরজা হয়ে উঠতে পারে। নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো সমুদ্রপথে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে পারে।”

ড. ইউনূস বলেন, “বাকি বিশ্বের জন্য মাতারবাড়ি হবে একটি প্রবেশদ্বার। আমরা এই দরজা খোলা রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

জাপানি সরকারের প্রতিক্রিয়া

জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পবিষয়ক পার্লামেন্টারি ভাইস মিনিস্টার তাকেউচি শিনজি বলেন, “বাংলাদেশ হলো একটি কৌশলগত কেন্দ্রবিন্দু, যা এশিয়াকে সংযুক্ত করে এবং এই অঞ্চলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।”

তিনি জানান, জাপান বাংলাদেশকে একটি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখতে চায় এবং ড. ইউনূসের নেতৃত্বে দেশটির উন্নয়নকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।

তাকেউচি আরও বলেন, “বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ বাড়াতে জাপান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করা সম্ভব।”

সভায় উপস্থিত ছিলেন

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং টোকিওস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও কৌশলগত অংশীদারত্ব সম্প্রসারণের বিষয়েও আলোচনা হয়।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন