শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

পুতিনের শান্তির শর্ত: ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে ন্যাটো সম্প্রসারণ বন্ধ ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি


রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘায়িত পরিস্থিতিতে নতুন মোড় নিচ্ছে সম্ভাব্য শান্তি আলোচনা। ক্রেমলিন ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে একাধিক শর্ত দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—ন্যাটোর পূর্ব দিকে সম্প্রসারণ স্থায়ীভাবে বন্ধের লিখিত নিশ্চয়তা, ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থান নিশ্চিত করা এবং রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।

সূত্র জানায়, পুতিন আরও দাবি করেছেন ইউক্রেন, জর্জিয়া এবং মলদোভার মতো দেশগুলোর ন্যাটো সদস্যপদ চিরতরে বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে তিনি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং ইউরোপে রাশিয়ার জব্দকৃত সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন।

এই প্রস্তাবনা উঠে এসেছে পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক দীর্ঘ বৈঠকে। প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা আলোচনায়, পুতিন যুদ্ধবিরতির একটি খসড়া তৈরি করতে সম্মত হলেও, কবে নাগাদ এই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে তা স্পষ্ট নয় বলে জানানো হয়েছে।

রাশিয়ার একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র রয়টার্সকে জানায়, “পুতিন শান্তি চান—তবে যেকোনো মূল্যে নয়। যদি তিনি দেখেন যে, নিজের শর্তে শান্তি সম্ভব নয়, তবে আরও শক্ত অবস্থান নিতে দ্বিধা করবেন না।” তার ভাষ্যমতে, সামরিক শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে ইউক্রেন এবং ইউরোপকে এই বার্তা দেওয়া হবে যে, ভবিষ্যতে শান্তির সম্ভাবনা আরও কঠিন হতে পারে।

অন্যদিকে মস্কোও পরিষ্কার করে বলেছে, যুদ্ধবিরতির পূর্বশর্ত হিসেবে ইউক্রেনের নিরস্ত্রীকরণ এবং রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত চারটি অঞ্চলের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে। এই অবস্থানে রাশিয়া কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়।

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “পুতিন যদি আলোচনার টেবিলে না আসেন, তবে সেটা হবে আগুন নিয়ে খেলা। রাশিয়া যদি শান্তির উদ্যোগ বিলম্বিত করে, তবে নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে।”

অন্যদিকে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্ররা জানিয়ে দিয়েছেন, ন্যাটো সদস্যপদ বিষয়ে রাশিয়ার কোনো ভেটো অধিকার নেই। ইউক্রেন পশ্চিমা শক্তির কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চায় এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে আপসের পথ খোলা রাখছে না।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আলোচনা যদিও যুদ্ধের একটি সমাপ্তি সূচক হতে পারে, তবুও বাস্তবে এটি কৌশলগত অবস্থান শক্ত করার অংশ হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই ঘটনাপ্রবাহের ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন