শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জনে ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা, রেমিট্যান্স শাটডাউনের হুঁশিয়ারি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন ঘিরে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রেমিট্যান্স শাটডাউন কার্যক্রমের হুঁশিয়ারি দিয়ে নতুন করে ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। প্রবাসীরা বলছেন, ড. ইউনূস পদত্যাগ করলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে, কারণ তারা আবারও বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

জুলাই আন্দোলনে প্রবাসীদের সক্রিয়তা ও ইউনূসের জনপ্রিয়তা
গত বছরের জুলাই মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দেশে শুরু হওয়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স শাটডাউন কর্মসূচি চালান। ওই কর্মসূচির প্রভাবে রেমিট্যান্সে বড় ধস নামে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবং ড. ইউনূস সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে।

বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আন্দোলনের জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত ৫৭ প্রবাসী বাংলাদেশিকে দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করার মধ্য দিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে ড. ইউনূসের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে পৌঁছেছে।

প্রবাসীবান্ধব উদ্যোগও ইউনূসের প্রতি আস্থা বাড়িয়েছে
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী যাত্রী ও তাদের স্বজনদের জন্য পৃথক ওয়েটিং লাউঞ্জ চালু করাসহ বিভিন্ন প্রবাসীবান্ধব পদক্ষেপ ইউনূস সরকারের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়িয়েছে। ওই সময় এক বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, “বিদেশ যাওয়া এবং ফেরার সময় যেন প্রবাসীরা কিছুটা স্বস্তি পান, সেই উদ্দেশ্যেই এই লাউঞ্জ চালু করা হয়েছে।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রেমিট্যান্স শাটডাউনের হুমকি
সম্প্রতি ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জনের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্রবাসী গ্রুপে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুবাই প্রবাসী আনাম মাহমুদ বলেন, “ড. ইউনূস যদি অভিমান করে পদত্যাগ করেন, তাহলে আমরা প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা আবারও রেমিট্যান্স শাটডাউন করে দেখিয়ে দেব।”

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ফাহাদ হক বলেন, “ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচন এবং অর্থনীতির পুনর্জাগরণে ড. ইউনূসের কোনো বিকল্প নেই। তার নেতৃত্বেই আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।”

সৌদি প্রবাসী সোহাগ বলেন, “যদি ইউনূস সরকার চলে যায়, প্রবাসীরা আবারও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবে এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেবে।”

অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স শাটডাউনের আশঙ্কাজনক প্রভাব
ড. ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী। চলতি বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশ ৩.২৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স অর্জন করে, যা দেশের ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ। এর আগে গত বছরের জুলাই মাসে আন্দোলনের সময় মাত্র ১০ দিন রেমিট্যান্স শাটডাউনেই আয় নেমে আসে ১.৯৫ বিলিয়নে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি এখন প্রবাসী রেমিট্যান্স। এই মুহূর্তে যদি প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করেন, তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে মারাত্মক ধাক্কা লাগবে। এটা হবে এক ধরণের অর্থনৈতিক বিপর্যয়।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া মিশ্র, কিন্তু প্রবাসীরা ঐক্যবদ্ধ
ড. ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও অধিকাংশ প্রবাসী একবাক্যে তার পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা মনে করেন, বর্তমান সংকটকালীন সময়ে ড. ইউনূসই দেশের জন্য সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব। তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হলে প্রবাসীদের মধ্যে আবারও ক্ষোভ বিস্ফোরিত হবে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন