শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

নকশা অনুমোদনে রাজউকের সার্ভার হ্যাকিং: ফটোকপি দোকান চক্রের জালিয়াতি ফাঁস, গ্রেপ্তার ২

তারিখ: ২২ মে ২০২৫

রাজউকের (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) নকশা অনুমোদনের ডিজিটাল সার্ভার হ্যাক করে বহুতল ভবনের অনুমোদন জালিয়াতির অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে একটি ফটোকপি দোকানের দুই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযুক্ত চক্র ‘নীল নকশা’ নামের ওই দোকান থেকে রাজউকের অফিসিয়াল সিস্টেমে প্রবেশ করে ১৫ তলা ভবনের অনুমোদন জালিয়াতি করে।

জালিয়াতির পেছনে প্রযুক্তি ও প্রতারণা

রাজউকের নিজস্ব অনলাইন নকশা অনুমোদন সার্ভার—ইসিপিএস হ্যাক করে মাত্র ১৭ মিনিটেই ১৮৫ ইউনিটের একটি ১৫ তলা ভবনের অনুমোদন আদায় করে চক্রটি। অনুমোদনের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের পাশের বাউনিয়া এলাকায় জলাশয়ের ওপর এই ভবনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, যেখানে ভবন নির্মাণ আইনত নিষিদ্ধ।

রাজউকের কর্মকর্তারা জানান, অভিযোগ ওঠা ভবনের ডিজাইন সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ওই দোকানের কম্পিউটারেই পাওয়া গেছে। এমনকি জাল সিল ও ভুয়া জিমেইল ব্যবহার করে সার্ভারে নকশা আপলোড করা হয়েছে। অভিযুক্ত দোকান মালিকের ব্যাংক একাউন্টে অনুমোদন ফি জমা দেয়ার প্রমাণও পাওয়া গেছে।

গ্রেপ্তার ও অভিযান

বৃহস্পতিবার সকালে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নকল সিল জব্দ করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে দোকানের দুই কর্মচারীকে, তবে মালিক এখনও পলাতক। গ্রেপ্তারকৃত একজন বলেন, “হ্যাকিংয়ের পর ১৫ তলার অনুমোদন হয়েছে, তাই আমাদের ধরে এনেছে।” অপরজন জানান, “ক্যাডিট কার্ড থেকে টাকা জমা হয়েছে এমন একটি ফাইল দেখিয়ে আমাদের কাজ করানো হয়েছিল।”

রাজউকের প্রতিক্রিয়া

রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুল ইসলাম বলেন, “ভুয়া নকশাটি দোকানের কম্পিউটারে পাওয়া গেছে, সঙ্গে ভুয়া জিমেইল ব্যবহার করে সার্ভারে আপলোডের তথ্যও মিলেছে।”

সংস্থার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “যেখানে অনুমোদন দেখানো হয়েছে, তা একটি ‘ওয়াটার বডি’। এখানে ভবন নির্মাণের সুযোগ নেই। এটি জালিয়াতি, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং মামলা দায়ের করে পুলিশে হস্তান্তর করা হবে।”

সার্ভার বন্ধ, নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম স্থগিত

গত মঙ্গলবার সার্ভার হ্যাকিংয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরপরই রাজউক কর্তৃপক্ষ অনলাইন নকশা অনুমোদন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। নতুন করে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই সার্ভার চালু না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

পরবর্তী পদক্ষেপ

রাজউকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সার্ভার সুরক্ষা জোরদার করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় তদন্ত চলছে। এ ঘটনার সঙ্গে রাজউকের কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই জালিয়াতি ঢাকার অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণের এক ভয়ংকর দিক উন্মোচন করল, যেখানে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে অযোগ্য এলাকা পর্যন্ত বৈধতার ছাপ লাগানো সম্ভব হচ্ছে। প্রশাসনের কড়া নজরদারি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা জোরদার করাই এখন সময়ের দাবি।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন