শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ডিসেম্বরের মধ্যে রোডম্যাপ না এলে সরকারের প্রতি সমর্থন কঠিন: মির্জা ফখরুল

বিএনপির হুঁশিয়ারি
ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপির সমর্থন অব্যাহত রাখা কঠিন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দলটি। বৃহস্পতিবার বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের এই অবস্থান তুলে ধরেন কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ডাক
তিনি বলেন, জুলাইয়ের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে মানুষের হারানো ভোটাধিকার, সাংবিধানিক ও মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে একটি সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য রোডম্যাপ অবিলম্বে ঘোষণা করতে হবে।

সরকারের মূল কাজ নির্বাচন
বিএনপি মনে করে, এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি ক্ষুদ্র আকারের উপদেষ্টা পরিষদই যথেষ্ট।

বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ দাবি
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মোশাররফ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা নতুন একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বলে জানা যায়। এতে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্যও নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এসব কারণেই বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ জরুরি।

অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ
তিনি আরও বলেন, এই সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে এমন প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি কিছু কর্মকাণ্ডে দেখা যাচ্ছে—কিছু মহলের রাজনৈতিক ফায়দা বাস্তবায়নই যেন এই সরকারের মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মানবিক করিডোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকারের
মানবিক করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই বলে মন্তব্য করে মোশাররফ বলেন, জাতীয় স্বার্থ, নিরাপত্তা ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই।

সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া চলবে একসঙ্গে
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সমান্তরালভাবে চলতে পারে। পাশাপাশি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াও চলমান থাকবে।

রোডম্যাপ উপেক্ষা হলে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা
বিএনপি নেতা সতর্ক করে বলেন, আজকের এই দাবিগুলো যদি আগের মত উপেক্ষিত হয়, তবে বিএনপি সরকারকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে কিনা, তা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে।

জাতীয় প্রত্যাশা ও দায়িত্ব
মোশাররফ বলেন, দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখা ও অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে সরকারকে নির্বাচন পর্যন্ত জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

নির্বাচন কমিশন ঘেরাও উদ্দেশ্যমূলক
নির্বাচন কমিশন ঘেরাও প্রসঙ্গে বিএনপি মনে করে, যখন রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে সংস্কার সনদ তৈরির আলোচনা চলছে, তখনই একই দাবিতে আন্দোলন বিভ্রান্তিকর। এটি জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা।

নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে
বিএনপি দাবি করে, আইন অনুযায়ী গঠিত বর্তমান নির্বাচন কমিশনেই সব পক্ষের মতামত নেওয়া হয়েছে। একে ঘিরে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।

ইশরাকের শপথে বিলম্ব সরকারের ব্যর্থতা
খন্দকার মোশাররফ বলেন, আদালতের রায় অনুযায়ী ইশরাক হোসেনের শপথ দ্রুত গ্রহণ করানো উচিত। জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজনের শপথ না করানো সরকারের দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক।

জনচাপে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সংস্কৃতি হতাশাজনক
তিনি বলেন, সরকার এখন জনচাপের মুখে সিদ্ধান্ত নেয়, যা ক্ষমতা ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করছে। এ সংস্কৃতি অন্যদের কাছেও দাবিদাওয়ার পথ খুলে দিচ্ছে, যা অনভিপ্রেত।

সরকারকে এখনও সহযোগিতার মনোভাবেই দেখছে বিএনপি
সংবাদ সম্মেলনের শেষভাগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বিএনপি এখনো সরকারকে সহযোগিতা করছে। কিন্তু সরকারের সৃষ্ট পরিস্থিতি সেই সহযোগিতার পথ সংকুচিত করছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন