শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

১২ দলীয় জোটের সমাবেশে নজরুল ইসলাম খান: ফ্যাসিবাদের পতন হলেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়নি

জাতীয় প্রেসক্লাবে ১২ দলীয় জোট আয়োজিত এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, “দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, কিন্তু এখনও দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস করবো না, কেউ করতে চাইলে আমরা বাধা দেবো।”

সোমবার (২০ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি এসব মন্তব্য করেন। “আওয়ামী পুনর্বাসন হচ্ছে”—এমন আলোচনার সমালোচনা করে নজরুল বলেন, “যে দল সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত, তাদের নেত্রী কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাসনে, হাজার হাজার নেতা-কর্মীর নামে মামলা, সেই দল আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করবে—এটা ফাইজলামি।”

তিনি আরও বলেন, “জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ১৬ বছরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ১৭ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। জুলাই আন্দোলনে সহস্রাধিক প্রাণ গেছে। হাজারো মানুষ আহত, মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছে। এই ত্যাগের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে। কিন্তু এখনো জনগণের ভোটাধিকার ফিরে আসেনি।”

নজরুল ইসলাম উল্লেখ করেন, “গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে বিএনপি ২০১৭ সালে ‘ভিশন-২০৩০’ এবং পরবর্তীতে ২০২৩ সালে তারেক রহমানের নেতৃত্বে ২৭ দফা প্রস্তাব দেয়, যা পরে ৩১ দফা হিসেবে গৃহীত হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যেসব সংস্কার প্রস্তাব রয়েছে, তার প্রায় সবই এই রূপরেখায় অন্তর্ভুক্ত।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা ক্ষমতায় গেলে এই রূপরেখা বাস্তবায়ন করব ইনশাআল্লাহ। দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা, ক্ষমতার ভারসাম্য ও জনগণের সেবায় রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যেই আমাদের সংস্কার প্রস্তাব। সংবিধান সংশোধনের জন্য নির্বাচিত সংসদ প্রয়োজন—আমরা সেই লক্ষ্যেই প্রস্তুত। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে।”

অন্য বক্তাদের বক্তব্য

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার। তিনি অবিলম্বে একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানান এবং বলেন, “তারেক রহমান পাহাড়সম জনপ্রিয় নেতা, দেশে ফেরার পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে সরকার তা পরিষ্কার করুক।”

বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “তারেক রহমানের দেশে ফেরার নিশ্চয়তা দিন। এনসিটি বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার ষড়যন্ত্র মানা হবে না। ডিসেম্বরের পর একটি মুহূর্তের জন্যও বর্তমান সরকারকে সহ্য করা হবে না।”

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা অভিযোগ করেন, “মানবিক করিডোর ও বন্দর হস্তান্তরের নামে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় পূর্ব তিমুর বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে। এখনই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে হবে, না হলে পিঠের চামড়া থাকবে না।”

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম বলেন, “তারেক রহমান দেশে ফিরবেন, নির্বাচন হবে, নইলে সরকার দেশ ছেড়ে পালাবে।”

অন্যান্য দাবিসমূহ

  • তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথ সুগম করতে হবে
  • ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে
  • নারী সংস্কার কমিশন বাতিল করতে হবে
  • ডিসেম্বরের মধ্যে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে

অংশগ্রহণকারী নেতারা

সভায় আরও বক্তব্য দেন:

বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটু, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, লেবার পার্টি বাংলাদেশের লায়ন ফারুক রহমান, কল্যাণ পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ, জাগপার ইকবাল হোসেন প্রধান, ইসলামী ঐক্য জোটের মাওলানা আব্দুল করিম, পিএনপির ফিরোজ মোঃ লিটন, নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির এম এ মান্নান, জনতার অধিকার পার্টির তারিকুল ইসলামসহ আরও অনেকে।

১২ দলীয় জোটের নেতারা একযোগে ঘোষণা দেন—দ্রুত নির্বাচন না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে বিদায় জানানো হবে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন